কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া:
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফের ১২ অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুরা শীতের শুরুতে ঠান্তাজনিত রোগসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এইচআইভি এইডসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে শতাধিক। এর মধ্যে মারা গেছে একজন। ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ জন এবং বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মারা গেছে ৫ রোহিঙ্গা শিশু।
সরেজমিন দেখা গেছে, নারী-শিশু ও বয়স্ক রোহিঙ্গারা ছাড়াও ঝুপড়ি ঘরসহ শিবিরের বাইরে থাকা রোহিঙ্গারা প্রচন্ড শীতে কাঁপছে। ফলে নারী-শিশুরা ঠান্ডাজনিত সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের ফকিরাবাজারের বাসিন্দা আব্দুস সালাম (৫০) জানান, সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা কর্তৃক ত্রাণ সামগ্রী পাশাপাশি শীতের কম্বল পাওয়া গেলেও ছোট শিশুদের জন্যে কোনো প্রকার বস্ত্র না পাওয়ায় শীতে সমস্যা হচ্ছে শিশুদের। ঝুপড়ি ঘরে উপরে ছাউনি থাকলেও নিচে কাদা মাঠি হতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগে।
থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এইচ ব্লকের মাঝি আয়াতুল্লাহ জানান, তার ব্লকের ১২০টি ঝুপড়ি ঘর রয়েছে। তারা এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের শীতের কাপড় বা কম্বল পায়নি। শীতে ঠাণ্ডাজনিত কারণে বেশ কিছু শিশু সর্দি, জ্বর, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সি-ব্লকের মাঝি লালু মিয়া জানান, তার ব্লকের অধিকাংশ শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও নানান সংক্রামক রোগও দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের মাঝে।
মৌচনি ক্যাম্পে ঝুপড়ি ঘরে আশ্রয় নেওয়া নতুন আসা রোহিঙ্গা নারী তসলিমা আক্তার (৩২) জানান, এক কাপড়ে তারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। এখন শীতে কষ্ট পাচ্ছে সন্তানেরা। শিশুদের কান্নাকাটির জন্য এই ঝুপড়ি ঘরে রাতে কারো ঘুম হয় না।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন আব্দুস সালাম জানান, এ পর্যন্ত এইচআইভি পজেটিভ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু সনাক্ত করা হয়েছে। মরিয়ম বেগম নামের এক রোহিঙ্গা নারী মারা গেছে এইডস রোগে। এছাড়াও ডিপথেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে ৬৫ জন রোহিঙ্গা। মারা গেছে পাঁচ শিশু।
তিনি বলেন, হাঁচি, কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্তের গলার পিছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। টিকাদানের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা যায়।
এইডস ও ডিপথেরিয়া ছাড়াও ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, সর্দি-জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ, ইনফেকশন, রক্ত ঝরা ও চোখের এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের মাঝে। তবে ডিপথেরিয়া রোগটি বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে এ রোগটি রোহিঙ্গাদের মাঝে আবার দেখা দিয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন আর