উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ব্যবহার করায় উখিয়া উপজেলা প্রশাসনে মারাত্মক জনবল সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে সরকারি কাজে চরম অবহেলা করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এনিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি উত্থাপন করলেও সুরাহা হচ্ছেনা বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণ জনগণ তাদের ব্যক্তিগত জরুরী কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে ভোক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন বেশ কয়েকটি দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, অফিসে কর্মকাণ্ড ছাড়াই কর্মচারীরা নিরলস সময় কাটাচ্ছে। জানতে চাওয়া হলে কয়েকজন কর্মচারী বলেন, স্যারকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সময় পেলে মাঝে মধ্যে অফিসে আসেন। উপজেলা অফিসারের অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, ইউএনও মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান অফিসে নেই। কর্মরত একজন কর্মচারী জানান, ইউএনও স্যার ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ভূমি প্রশাসনেও একই অবস্থা। সেখানে দায়িত্বরত সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইকেরামুল ছিদ্দিককে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রের্ট হিসেবে বালূখালী ক্যাম্পে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তথাপিও তিনি নিজের অফিস ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে দিনের অতিরিক্ত সময়ে অফিস করতে দেখা গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস, সমবায় অফিস,সমাজসেবা অফিস,শিক্ষা অফিস,মৎস্য অফিস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, প্রাণি সম্পদ অফিসসহ একাধিক সরকারি দপ্তর ঘুরে কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ক্যাম্পে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা পরিষদে গিয়ে কর্মকর্তার দেখা পায়নি এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা হয়। বালুখালী পালং গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, সে কৃষি অফিসে গিয়েছিলেন কিছু পরামর্শ নেয়ার জন্য। কিন্তু কর্মকর্তা না থাকায় তাকে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। এভাবে উপজেলা পরিষদ চত্বরে কর্মকর্তার অপেক্ষা বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী তাদের কষ্টের কথা সাংবাদিকদের জানালেন। বিশেষ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকান্ডে জড়িত ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের শরনার্থী ক্যাম্পে দায়িত্ব দেওয়ার কারণে স্থানীয় জন সাধারণ বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পাশাপাশি ইউনিয়ন ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ড মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, বেশির ভাগ জনসাধারণ উপজেলা পরিষদ নির্ভর। যেহেতু জমি-জমা, কৃষি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষা, সমাজ সেবা সহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিদিন শতশত লোকজন এসে কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কর্মকর্তার অভাবজনিত কারণে উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ড ঝিমিয়ে পড়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি কর্মকর্তা শূণ্যতার কারণে উপজেলার সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার ক্যাম্পে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্যাম্প থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর