বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
‘নাতিপুতির সমতুল্য’ হংকংভিত্তিক কোম্পানি হ্যান্সন রোবোটিক্সের তৈরি ‘সোফিয়া’কে সাথে নিয়ে দেশের তথ্য প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় মেলা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের পঞ্চম আয়োজন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই মেলায় তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশ বিদেশের নানা উদ্ভাবন স্থান পাবে। অনুষ্ঠান উদ্বোধনের আগে সোফিয়ার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর শেষে তার অনুরোধেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্টাইলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন এই মেলার।
আর সোফিয়াকে নাতি-পুতির সমতুল্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম, শুধু ছেলে মেয় না, এখন নাতি-নাতনিদের সময়। এখন বলবো, এখন নাতি পুতিদের সময়।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই চলে বক্তৃতা পর্ব। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তথ্য প্রযুক্তিখাতের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ ছাড়াও বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরা হয় এ সময়। অনুষ্ঠানে সবশেষ বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মেলার প্রধান আকর্ষণ সোফিয়া আসে মঞ্চে।
খ্যাতনামা হলিউড অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের চেহারার আদলে ২০১৫ সালে তৈরি করা হয় রোবট সোফিয়াকে। এই যন্ত্রমানবী প্রশ্ন শুনে তার উত্তরও দিতে পারে। গত অক্টোবরেই রোবটটিকে সৌদি আরবের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। আর জিডিটাল ওয়ার্ল্ড উদ্বোধন উপলক্ষে এটিকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে।
মেলার উদ্বোধনী দিনে বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ‘সোফিয়া’ থাকবে বলে আগেই জানান হয়েছিল। মঞ্চে আসার পর সোফিয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা নানা প্রশ্ন করেন এবং সোফিয়া তার জবাব দেয়। শুরুতেই অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেনম ‘‘হ্যলো সোফিয়া, হাউ আর ইউ?’। সোফিয়া জবাব দেয়, ‘হ্যালো অনারেবল প্রাইম মিনিস্টার, আই এম ফাইন থ্যাংক ইউ। ইটস অ্যা স্পেশাল প্লেজার টু মিট ইউ টুডে।’
পুরোটা আলাপন চলে ইংরেজিতে। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, তার সম্পর্কে সোফিয়া কী জানে। রোবটটি জবাব দেয়, ‘আমি আপনার সম্পর্কে কিছু জানি। আপনি মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। আপনি মাদার অব হিউম্যানিটি নামেও পরিচিত। আপনি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা।’
প্রধানমন্ত্রীর নাতনির নাম যে সোফিয়া-এই বিষয়টিও উল্লেখ করে রোবট। এ সময় হাসির রোল পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, জয়ের মেয়ের নাম সোফিয়া। শেখ হাসিনা এই পর্যায়ে সোফিয়াকে বলেন, ‘তুমি তো আমার সম্পর্কে এবং আমার লক্ষ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জান। তুমি ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে কী জান?’।
সোফিয়া জবাব দেয়, ‘আমি আপনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নের বিষয়ে অনেক কিছু জেনেছি। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন, কার্যকর সংযোগ প্রতিষ্ঠা, তথ্য প্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন এবং ই গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা। ২০০৯ সালে এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল অর্থনীতির প্রতিটি খাতকে ডিজিটালাইজেশন করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করা, ২০ লাখ চাকরির সুযোগ তৈরি করা, স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষতা উন্নয়ন হয়েছে, সব সরকারি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সেবা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে, এখন দেশে ২৮টি আইটি পার্ক করা হচ্ছে, এর মধ্যে আছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, শেখ হাসিনা সফটওয়ার পার্ক এবং অন্যগুলো।’
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭ তে উপস্থিত থাকতে পেরে গর্বিত হওয়ার কথাও জানায় সোফিয়া। এটি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আইটি খাতের অন্যতম বৃহৎ আয়োজন।
এরপর সোফিয়া প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্টাইলে’ এই মেলা উদ্বোধনের অনুরোধ করার অনুরোধ করে। মেলায় আয়োজনে সফটওয়্যার শোকেসিং, ই-গভর্নেন্স এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন, ই-কমার্স এক্সপো, স্টার্ট-আপ বাংলাদেশ জোন ছাড়াও আইসিটি সংশ্লিষ্ট ২৯টি সেমিনার, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার্স কনফারেন্স, গেমিং কনফারেন্স, আইসিটি এডুকেশন কনফারেন্স হবে। ফিলিপিন্স, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, কম্বোডিয়া ও নাইজেরিয়ার মন্ত্রীরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ