নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করছে দালালরা। এমনই একটি দালাল চক্রের হাত থেকে শিশুসহ দুই রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোরে রাজধানীর ডেমরার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. গাউসুল আজম ও র্যাব-১০ এর একটি দল। বাড়ি থেকে রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম (২৫), তার মেয়ে শফিকা (৬) ও জাহেদা বেগমকে (১৬) উদ্ধার করা হয়। তাদের আশ্রয় দেওয়া, কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে আসার অপরাধে আটক করা হয় দালাল রাজু মোল্লা (৪৫) ও মোখলেছুর রহমানকে (৬৫)।
র্যাব-১০ এর কর্মকর্তা মেজর আহমেদ হোসেন মহিউদ্দীন জানান, আটক দালালদের সহায়তায় শিশুসহ ওই দুই রোহিঙ্গা নারী ঢাকার একটি বাসায় এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট গাওসুল আজমের নেতৃত্বে আভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার ও দালালদের আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা নারী সেতারা বেগম ও জাহেদা বেগমের পরিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বছর তিনেক আগে সেতারা বেগমের ছোট ভাই সলিমুল্লাহ অবৈধ পথে মালয়েশিয়া গিয়েছিল। ছয় মাস আগে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে জাহেদার বিয়ে হয়। তখন থেকেই সেতারা বেগমের পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিলেন জাহেদা।
মিয়ানমার থেকে তারা বাংলাদেশে প্রবেশের পর প্রথমে টেকনাফ উপজেলার সোয়ানখালীতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির বাসায় আশ্রয় নেন। পরে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। তখন স্থানীয় এক হোটেলে রান্নার কাজ করতেন সেতারা বেগম। সেখানেই দালাল রাজু মোল্লার সঙ্গে পরিচয় হয় তার।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে সেতারা জানতে পারেন রাজু মোল্লার চাচা রফিকুল ইসলামও তার ছোট ভাই সলিমুল্লাহর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। সেই পরিচয় পাওয়ার পর রাজুর সঙ্গে সেতারার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়।
দালাল রাজু মোল্লা মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাসপোর্ট করার জন্য সেতারা ও জাহেদাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিয়ে আসেন। সেখানকার একটি বাসায় তিন দিন অবস্থান করেন। এ সময় রাজু তার পরিচিত অন্য দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ওই দুই নারীর পাসপোর্ট করার চেষ্টা করতে থাকেন।
গত ২৮ নভেম্বর রাজু মোল্লা শিশুসহ ওই দুই নারীকে ডেমরার মোখলেছুর রহমানের বাসায় এনে লুকিয়ে রাখেন। পরে গোপন খবরে বৃহস্পতিবার র্যাব অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে এবং আটক করা হয় রাজু ও মোখলেছুরকে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই মামলায় রাজুকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও মোখলেছুরকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর উদ্ধার রোহিঙ্গা নারীদের বালুখালী ও জামতলী ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে জানান র্যাব-১০ এর কর্মকর্তা মেজর আহমেদ হোসেন মহিউদ্দীন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ