নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমারে চার দিন সফর শেষে ঢাকা সফরে এলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বক্তব্য দেন পোপ ফ্রান্সিস।
আর এ উপলক্ষে সাজানো হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একই সঙ্গে সব দিক থেকে এই অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায় মূল মঞ্চের ঠিক ডান পাশে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষ বাসানো হয়েছে। আর এর ঠিক পাশেই র্যাবের একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও স্থাপন করা হয়েছে। পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে বাসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
এ ছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে মূল রাস্তার ওপরেও ওয়াচ টাওয়ার বসিয়েছে র্যাব। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে ও বাইরে চতুর্দিকে বিভিন্ন খুঁটিতে বাসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। প্রতিটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। গতকাল বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এসব ক্যামেরা বসাতে দেখা গেছে।
একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধন করতে ছিটানো হচ্ছে স্প্রে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে তল্লাশি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ জন্য অনুষ্ঠানের অন্য সব কার্যক্রমের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মঞ্চের ডান পাশে বসানো হয়েছে বেশ কিছু সাউন্ড সিস্টেম। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকে লাগানো হয়েছে মাইক। মঞ্চের বাম পাশে সংগীত পরিবেশনের জন্য একটি জায়গা ঠিক করে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসকে স্বাগত ও সম্মান জানানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মঞ্চের সামনের অংশে কিছুটা জায়গা ফাঁকা রেখে বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। এরপর সাধারণদের বসার জন্য চেয়ার সাজানো হয়েছে। আর প্রতিটি চেয়ার সাজানোর পর একটি করে ব্লক নম্বর দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট ব্লকে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
পোপের আগমন এবং তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি সদর দপ্তরে গত রোববার পোপের আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এ কথা জানান তিনি।
কমিশনার জানান, জাতীয় স্বার্থে পোপকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানীয় ব্যক্তি। সফরের সকল ভেন্যু, হোটেল ও বিমানবন্দরকেন্দ্রিক থাকবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা। গমনাগমনকালে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে প্রস্তুত থাকবেন সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।
আজ শুক্রবার সকালে সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার পর বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। সেখান থেকে বিকেল ৪টায় যাবেন প্রধান গির্জা পরিদর্শনে। সেখানে তিনি বিশপ ও জ্যেষ্ঠ যাজকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শেষে সেখানে শান্তির জন্য আন্তধর্মীয় ও সর্বজনীন ঐক্য বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।
সফরের তৃতীয় ও শেষ দিন শনিবার সকাল ১০টায় পোপ ফ্রান্সিস রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মাদার তেরেসার বাসভবন পরিদর্শনে যাবেন। সেখান থেকে হলি রোজারি গির্জার যাজক, ধর্মীয় নারী-পুরুষ এবং অন্যদের সামনে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে প্যারিস কবরস্থান ও প্রাচীন গির্জা ঘুরে দেখবেন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে নটর ডেম কলেজের তরুণদের সামনে বক্তব্য দেবেন পোপ ফ্রান্সিস। বিকেল পৌনে ৫টায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
তিনদিনের সফরে বৃহস্পতিবার ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ঢাকায় এসেছেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিকেল ৩টার দিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। এ সময় তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর থেকেই পোপ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ