আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মোবাইল ফোনে দিব্যি চলছিল প্রেম। কিন্তু দেখা করতে চেয়েই হলো বিপত্তি। মহিলা পুলিশ কর্মীর প্রেমের টোপ গিলে কারাগারে ঢুকল প্রতারক। অভিনয় শিখিয়ে সিনেমা-সিরিয়ালে সুযোগ পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা নেয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকালে সুকুমার রায় ওরফে আকাশ নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ দিন প্রেমিকার সঙ্গে প্রথমবার দেখা করার জন্য সেজেগুজে এসেছিল আকাশ। পরনে জিনস, জ্যাকেট। কথা মতো প্রেমিকা পড়েছিল লালচে রঙের চুড়িদার। সেটাই ছিল ভিড়ের মধ্যে চিনে নেয়ার বার্তা। বিকালের দিকে দুজনের দেখা হয় পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার বিড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। প্রেমিকাকে দেখে মুগ্ধ প্রেমিক। এটা ওটা কথা এগোলো। আর দেরি না করে এ দিনই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আকাশ। সিঁদুর কিনে আনে। তখনও অবশ্য আকাশ জানে না, এক চুটকি সিদুঁরের কী মূল্য চোকাতে হবে তাকে!
বিড়া চৌমাথায় একটি হোটেলে যায় যুগল। ১৫ টাকা দিয়ে কেনা চাউমিন যখন কাঁটা চামচ দিয়ে খাচ্ছে প্রেমিকা, সে দিকে মুগ্ধ চোখে চেয়ে আকাশ। সঙ্গে গুন গুন করে গান। প্রেমিকাকে রুমাল এগিয়ে দেয় আকাশ। প্রেমিকার লিপস্টিক মাখা রুমাল যত্নে ভরে পকেটে। দুজনে বেরোয় দোকান থেকে। এ বারেই অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। হঠাৎই কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে এক মহিলা ও দুই যুবক। আকাশের জামার কলার ধরে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে তারা। প্রেমিকাও ওঠে গাড়িতে।
তখনও বুঝে উঠতে পারছে না আকাশ, ঘটছেটা কী! ভুল ভাঙল ধমক-চমকে। যখন প্রেমিকাও গলা মোটা করে দাবড়ানি দিয়ে চুপ করে বসতে বলল আকাশকে, তখন সে বোঝে, এত দিন ফাঁদ পেতে শিকার ধরে এ বার সে নিজেই পড়েছে আরও বড় ফাঁদে। পুলিশ আকাশকে আনে বনগাঁ থানায়। পুলিশ জানায়, দিন কয়েক আগে বনগাঁ কেবল টিভিতে একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় শিক্ষা, সিরিয়াল-সিনেমায় সুযোগের কথা বলা হয়। যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বরও দেয়া হয়েছিল।
আইসি সতীনাথ চট্টরাজের কাছে খবর ছিল, সিনেমায় সুযোগ দেয়ার নাম করে টাকা হাতানো হচ্ছে। আইসির নির্দেশ মতো এক মহিলা কনস্টেবল বিজ্ঞাপনে দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। অভিনয় শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। টাকা-পয়সা নিয়ে কথা এগোয়। অন্তরঙ্গতা বাড়ে। নতুন সঙ্গিনীর হদিস পেয়ে আকাশও তখন দিশাহারা। দেখা করার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বলতে থাকে। পাখি ফাঁদে পা দিয়েছে বুঝতে পেরে বাকি ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলে পুলিশ। শেষমেষ ধরা পড়ে ওই যুবক।
পুলিশকে আকাশ জানিয়েছে, ৬ মাসের কোর্সের জন্য ৫ হাজার টাকা নিত। তারপরে সব ভোঁ ভাঁ। তাকে কোথাও সুযোগ করিয়ে দেয়ার মতো যোগ্যতাই নেই তার। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর্থিক প্রতারণা তো বটেই, মেয়েদের দেহ ব্যবসার কাজেও নামাত সে। পুলিশ ওই চক্রের বাকিদের খোঁজ করছে।
লকআপে ভেঙে পড়ে এত দিন ধোঁকাবাজি করে আসা আকাশ। বলতে থাকে, ‘এত বড় ধোঁকা খেতে হবে, ভাবতে পারছি না।’ আর পোশাক বদলে পুলিশের উর্দি গায়ে মহিলা কনস্টেবল তখন বাইরে বসে বলছেন, ‘এমন হাড়কিপ্টে ছেলে জীবনে দেখিনি। বিয়ে করতে চেয়ে মাত্র ১৫ টাকা দিয়ে চাউমিন খাওয়ালো!’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ