২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:২৩

বিজেপির দাবি রাহুল গাঁন্ধী কি হিন্দু ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পড়ন্ত বেলায় গুজরাতের নবসারিতে আজানের শব্দ শুনে বক্তৃতা থামিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদি। আর ঠিক একই সময়ে ভোট-বাজারে তাঁর দল তোলপাড় ফেলে দিল এক প্রশ্ন তুলে, রাহুল গাঁন্ধী কি হিন্দু?
ভোটের সময় আচমকাই কোথা থেকে এল এমন একটি প্রশ্ন? যা নিয়ে কংগ্রেসকেও তড়িঘড়ি ব্যাখ্যা দিতে নামতে হল, রাহুল গাঁধী শুধু হিন্দুই নন, পৈতেধারী হিন্দু। পরম শিবভক্ত।
সকালেই সোমনাথ থেকে দ্বিতীয় ধাপের প্রচার শুরু করেন মোদি। টক্কর দিতে দুপুরেই সোমনাথ মন্দিরে পৌঁছন রাহুল। সেখানে অ-হিন্দু কেউ প্রবেশ করলে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। মন্দিরে কংগ্রেসের এক কর্মী সই করেন। পরে দেখা যায়, সেই সইয়ের উপরে ‘রাহুল গাঁন্ধীজি’ ও অহমেদ পটেলের নামও নথিভুক্ত রয়েছে। ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি শিবির— ‘‘প্রমাণ হল রাহুল গাঁন্ধী হিন্দু নন। তা হলে ভোটের সময় মন্দিরে-মন্দিরে ঘোরার ‘নাটক’ কেন?’’
এক সময় সনিয়া গাঁন্ধীকে আটকাতে জন্মসূত্রে তাঁর ‘বিদেশিনি’ পরিচয় নিয়েও রাজনীতিতে তোলপাড় হয়েছিল। সুষমা স্বরাজের মতো নেত্রী মাথা কামানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। সেটি অবশ্য বিজেপির ক্ষেত্রে ব্যুমেরাং হয়। কিন্তু এ বার গুজরাতের ভোটে মেরুকরণের রাজনীতির গন্ধ পেতেই লুফে নিয়েছে বিজেপি। রাহুল মন্দিরে ঘুরে ‘নরম হিন্দুত্ব’-র পথে এগোচ্ছেন। আর তাঁর পরিচয়-বিতর্ককে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত ধর্মকে ভোটের ময়দানে এনে ফেলেছে বিজেপি। তবে কংগ্রেস রাহুলকে ‘পৈতেধারী হিন্দু’ বলায় এখন রাহুলের পারিবারিক শিকড় খুঁড়ে তুলছে সঙ্ঘ-বিজেপি।
খোদ মোদিই আজ কংগ্রেস সহ-সভাপতির সোমনাথ দর্শন প্রসঙ্গে টেনে এনেছিলেন জওহরলাল নেহরুকে। জওহরলাল হিন্দু-বিরোধী ছিলেন, সকাল থেকেই সেটা বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যান মোদী। তখন যদিও রাহুল মন্দিরে পৌঁছননি। মোদির মন্তব্য, ‘‘আজ সোমনাথ মন্দিরকে অনেকে স্মরণ করছেন। ইতিহাস ভুলেছেন? আপনার পরিবারের সদস্য দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এই মন্দির নির্মাণে খুশি ছিলেন না। সর্দার পটেল না থাকলে মন্দির তৈরি হতো না। রাজেন্দ্র প্রসাদ এই মন্দির উদ্বোধন করতে আসায় নেহরু অসন্তোষ প্রকাশ করেন।’’
দুপুর গড়াতে রাহুলের ধর্ম নিয়ে অস্ত্র হাতে পেতেই বিজেপি একে উচ্চগ্রামে নিয়ে যায়। এর আগে উন্নয়ন, নোট বাতিল কিংবা জিএসটি-র মতো বিষয়গুলি নিয়ে আক্রমণ করে ভোটের প্রচারে কংগ্রেস ছিল চালকের আসনে। রাহুলের প্রশ্নকে সামলাতে হতো বিজেপিকে। কিন্তু কয়েক দিন আগে থেকেই চা-ওয়ালা বিতর্ক কিংবা আজ রাহুলের হিন্দু পরিচয়ের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকেই জবাব দিতে বাধ্য করাচ্ছে মোদির দল।


ভোটের মোড় ঘুরতে দেখেই তাই অমদাবাদ ও দিল্লিতে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডাকে কংগ্রেস। সামনে আনে তিনটি ছবি। সনিয়াকে পাশে নিয়ে রাজীবের কোলে ছোট্ট রাহুলের নামকরণের অনুষ্ঠান, দ্বিতীয়টি প্রিয়ঙ্কার বিয়ের সময়ে পাশে রাহুল আর তৃতীয়টি রাজীবের শেষকৃত্যের সময়ে রাহুল। জন্ম, বিবাহ, শ্রাদ্ধ— হিন্দু সংস্কৃতির তিনটি ছবিতেই দেখা যাচ্ছে রাহুলের গলায় পৈতে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা থেকে দীপেন্দ্র হুডা বলেন, পরম শিবভক্ত রাহুল শুধু হিন্দুই নন, পৈতেধারী হিন্দু। সে কারণেই ১৮ কিলোমিটার হেঁটে কেদারনাথে গিয়েছিলেন।
কংগ্রেসের মতে, মন্দিরে রাহুল নাম নথিভুক্ত করেননি। এক কর্মী যখন সই করেছিলেন, তখন রাহুলের নাম ছিল না। পরে তাঁর নাম ঢোকানো হয়েছে। সে কারণেই ‘রাহুলজি’ লেখা রয়েছে। এটা বিজেপির ষড়যন্ত্র। কংগ্রেসের দাবি, রাহুল শুধু পরে ভিজিটর বুকে লিখেছেন। বিজেপির জবাব দিতে আগামিকাল গোপীনাথজি মন্দিরে পৌঁছবেন রাহুল।
সূত্র: আনন্দবাজার

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ৩০, ২০১৭ ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ