স্বাস্থ্য ডেস্ক:
দেশের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র মানসম্মত মাতৃস্বাস্থ্য সেবা দানে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। এমন তথ্য উঠে এসেছে মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১৬ তে। এদিকে বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে ২০১৪ এবং অন্যান্য গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায়, মানসম্মত মাতৃস্বাস্থ্য সেবা দানের ক্ষেত্রে সরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহের প্রস্তুতিতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তবে জরিপের এ ফলাফলকে অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল এ্যান্ড ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের অর্থাৎ জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে (১০০ শয্যার উপরে) মাতৃস্বাস্থ্য সেবার সবধরনের সুযোগই রয়েছে।’
সাম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী স্বাভাবিক প্রসব সেবাদানকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মাত্র ৩৯ শতাংশ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়ার জন্য নিজস্ব বা অন-কল সেবাদানকারী রয়েছে। আর মাত্র ৩ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মানসম্মত স্বাভাবিক প্রসব সেবাদানের প্রস্তুতি রয়েছে।
জরিপের এ ফলাফলকে অস্বীকার করে হাসপাতাল এ্যান্ড ক্লিনিক বিভাগের এই পরিচালক বলেন, ‘দেশে মোট ৭১৬টি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। যার মধ্যে ১০০ শয্যার বেশি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ১১৬টি। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (হাসপাতাল) মানসম্মত স্বাভাবিক প্রসব সেবা দানের সব ধরনের ব্যবস্থাই রয়েছে।’
জরিপ বলছে, দেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমছে না, বরং বাড়ছে। মায়েরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পর যদি সেখানে প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী উপস্থিত থাকেন এবং তারা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকেন তবেই এ মাতৃমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
এই জরিপে আরো বলা হচ্ছে, উপজেলা বা উচ্চতর পর্যায়ের মাত্র ৪৬ শতাংশ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং ২০ শতাংশ প্রাইভেট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি প্রসূতি সেবার ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মাত্র একজন সেবাদানকারী রয়েছেন।
এ প্রেক্ষিতে ডা. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উচ্চপর্যায়ের সব হাসপাতালেই জরুরি প্রসূতি সেবার ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমপক্ষে ৫ জন সেবাদানকারী রয়েছেন। শুধু জয়পুরহাট সদর হাসপাতালে সর্বনিম্ন ২৬ জন ডাক্তার রয়েছেন। যারা শিফট অনুযায়ী সবসময় চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। অতএব উচ্চপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে লোকবলের কোনো অভাব নেই।’
তবে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নানা সমস্যার কারণে মাতৃস্বাস্থ্য সেবার মান খারাপ স্বীকার করে এ ব্যাপারে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে ডা. জাহাঙ্গীর জানালেন, ‘এক্ষেত্রে প্রথমেই আমরা নজর দিচ্ছি লোকবলের দিকে। তাই ইতিমধ্যে অধিদফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তত ৫জন করে ডাক্তার কর্তব্য পালন করবেন। এ লক্ষে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছে অধিদফতর।’
মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ ২০১৬ তে আরো বলা হয়েছে, প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে ৯৬ শতাংশ সিজারিয়ান প্রসব হলেও মাত্র ১৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কম্প্রিহেনসিভ জরুরি প্রসূতি সেবা দানের ব্যবস্থা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল এ্যান্ড ক্লিনিক বিভাগের এই পরিচালক বলেন, ‘সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে এমনটা হতে পারে। কারণ এতদিন ধরে জেলা সিভিল সার্জন এ দায়িত্ব পালন করতেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবজনিত নানা প্রতিবন্ধকতায় তার একার পক্ষে সঠিক মনিটরিং করাও সম্ভব নয়। বিষয়টি অনুধাবনে এবং ক্লিনিকগুলোর মান বিবেচনায় গতমাস (অক্টোবর) থেকে প্রাইভেট ক্লিনকগুলোর লাইসেন্স অনুমোদনের দায়িত্ব নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সার্বিক নজরদারিতে ১৫ অক্টোবর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী মোট ১৭টি প্রাইভেট ক্লিনিকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে অধিদফতর থেকে। এতে প্রাইভেট সেক্টরে স্বাস্থ্যসেবাদান এখন থেকে আরো উন্নত হবে।’
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ