২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:০৯

ধর্ষণের আগে প্রার্থনা করানো হতো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের হাতে বন্দি শত শত ইয়াজিদি নারী। সবাই যৌনদাসী হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। তাদেরই একজন নাদিয়া মুরাদ। তাকে যৌনদাসী বানিয়ে রেখেছিল আইএস।সেই নরক থেকে পালিয়ে এসে ভয়ানক দিনগুলোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন কলম। ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ বইটিতেই সেই জীবনের কাহিনী তুলে ধরেছেন নাদিয়া।

কিভাবে ইয়াজিদি নারীদের ওপর অত্যাচার চালায় আইএস। গোটা বিশ্ব সেটা জানানোর জন্যই তার এই বই প্রকাশের একমাত্র লক্ষ্য। তিনি বর্তমানে জাতিসংঘের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে নিয়োজিত আছেন। আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দি ইয়াজিদি নারী এবং যারা জঙ্গিদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছেন, তাদের নিয়ে কাজ করছেন। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রায় তিন বছর আগে, উত্তর ইরাকে আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে পালিয়ে এসেছিলেন নাদিয়া। লন্ডনের এক হোটেলে বসে সেই দিনগুলোর কথাই বলছিলেন তিনি। ‘কাউকে না কাউকে তো এই কথা তুলে ধরতেই হত।’

২০১৪ সাল। তখন আইএস জঙ্গিদের দখলে গোটা উত্তর ইরাক। ইরাকের এই অংশে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ থাকতেন। জঙ্গিরা এসেই গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেয়। খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট তো চলেই, সেই সঙ্গে ইয়াজিদি নারী, তরুণী, কিশোরীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাদের বানানো হয় যৌনদাসী।

উত্তর ইরাকের ছোট্ট গ্রাম কোচো-তে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন নাদিয়া। তিনি তখন পড়াশোনা করছেন। গ্রামের প্রতিটি পরিবারই খুব গরিব। কিন্তু, দারিদ্র কখনও সেই গ্রামের খুশি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। সব ঠিকঠাকই চলছিল। ২০১৪ সালে গ্রামে ঢুকল জঙ্গিরা। বুড়ো-বাচ্চা সবাইকে গ্রামেরই একটা স্কুলে ঢুকিয়ে দিল তারা। নারী-পুরুষ আলাদা করে রাখা হলো। পুরুষদের রাখা হলো স্কুলের বাইরে। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ, আর সেই শব্দকে ছাপিয়ে মানুষের আর্তনাদ।

সেদিন নাদিয়াদের ছয় ভাইকেও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরপর তিনি ও গ্রামের অন্য নারীদের একটা বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় মসুলে। বাসে যেতে যেতেই চলে শারীরিক নিগ্রহ। মসুলে নিয়ে গিয়ে অল্পবয়সী মেয়েদের যৌনদাসী হিসেবে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। নাদিয়ার দাবি, একজন তার পেটে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। সেই ব্যক্তিই তাকে কিনে নেয়। তিনি বলেন, ‘নরক থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু, ধরা পড়ে গিয়েছিলাম। এরপর চলে গণধর্ষণ। ভেঙে পড়িনি। আমার মতোই হাজারো নারী জঙ্গিদের কব্জায় ছিল, এটাই আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে থাকলাম এক দিন মুক্ত হবেই!’

সেই সুযোগও এল একদিন। এক জঙ্গি দরজা না আটকেই বেরিয়ে গিয়েছিল। জঙ্গি চলে যেতেই সোজা দৌড়। আর পেছনে ফিরে তাকাননি। অন্ধকার রাস্তা ধরে অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে একটা বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় চান। সেই পরিবারই তাকে মসুল থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। পরে ২০১৫ সালে জার্মানির শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন নাদিয়া।

তিনি বলেন, বন্দি থাকাকালীন ইউরোপ, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া থেকে একের পর এক জঙ্গি আসত, আর প্রতিদিন ধর্ষণ করত তাকে। ধর্ষণের আগে প্রার্থনাও করিয়ে নেওয়া হত। মসুলে ২০ লাখ মানুষের বাস। দুই হাজার মেয়েকে আটকে রেখেছিল জঙ্গিরা। মসুলের বাসিন্দারা কেউ এগিয়ে আসেনি তাদের উদ্ধারে। তার মতো অনেক ইয়াজিদি নারী এখনও আইএস জঙ্গিদের কবলে।

‘জানি কী দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সেইসব মেয়েদের কাহিনী তুলে ধরছি।’ নাদিয়া আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চান। মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার ইচ্ছা তার।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২৫, ২০১৭ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ