নিজস্ব প্রতিবেদক:
উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নাই, পুরাতন মেশিনের কারণে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয় তাই ব্যবসা পরিচালনা করে লোকসান গুনছে পুঁজিবাজারের বেশকিছু কোম্পানি। বছরের পর বছর লোকসানে থাকায় পুঞ্জিভূত লোকসান এখন মূলধনের ৬০ গুণ। কিন্তু তবুও লাগামহীন পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ৫ কোম্পানির শেয়ার দর।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোকসানে থাকলেও কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা সামান্য হওয়ায় কারসাজিতে সক্রিয় রয়েছে একটি চক্র। যার ধারাবাহিকতায় শেয়ার দর বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে শেয়ার দর বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করে বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিত।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, পুঞ্জিভূত লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে মধ্যে সম্প্রতি রেকর্ড দর অতিক্রম করেছে ৫টি কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো-শ্যামপুর সুগার, সাভার রিফ্যাক্টরিজ, জিলবাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও জুট স্পিনার্স লিমিটেড।
শ্যামপুর সুগার মিলস
মূলধনের প্রায় ৬০ গুণ পুঞ্জিভূত লোকসান থাকলেও টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের শ্যামপুর সুগারের শেয়ার দর। গত এক যুগেও ব্যবসায়িক মুনাফায় ফিরতে না পারলেও বৃহস্পতিবার দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরে স্থিতি পেয়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই কোম্পানিটির শেয়ার ৩৯ টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে। যা বিগত দুই বছরের মধ্যে রেকর্ড দর।
লোকসানে থাকায় ৩০ জুন, ২০১৭ সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। সমাপ্ত হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৬৫.৭৫ টাকা। একই সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৬৫৯.৫৫ টাকা (নেগেটিভ) ও শেয়ার প্রতি কার্যকরি নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ৭৪.৬৯ টাকা (নেগেটিভ)।
এদিকে, প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৭.৬৪ টাকা। গত বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১৬.১৫ টাকা। এছাড়া শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হয়েছে ৬৭৭.১৯ টাকা (নেগেটিভ) ও শেয়ার প্রতি কার্যকরী নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ১৭.২৮ টাকা (নেগেটিভ)।
সাভার রিফ্যাক্টরিজ
১ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূলধনধারী সাভার রিফ্যাক্টরিজের পুঞ্জিভূত লোকসান ৫২ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের (২০১৭-১৮) প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.২১ টাকা। এদিকে, সদ্য সমাপ্ত বছরে (২০১৬-১৭) শেয়ার প্রতি ০.১৭ টাকা লোকসান হওয়ায় ‘নো’ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। কিন্তু তবুও বাড়ছে শেয়ার দর। বৃহস্পতিবার ৯.২৭ শতাংশ দর বেড়ে ১৬৯.৮০ টাকায় স্থিতি পেয়েছে। যা বিগত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক
১৬ কোটি টাকা মূলধনধারী মেঘনা কনডেন্সড মিল্কের পুঞ্জিভূত লোকসান ৬২ কোটি ২৭ লাখ টাকা। গত একযুগেও মুনাফার মুখ দেখেনি কোম্পানিটি। তবুও টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে শেয়ার দর।১ বছরের ব্যবধানে ৬.৩০ টাকায় থাকা শেয়ারটি এখন লেনদেন হচ্ছে ১৯.৫০ টাকা। যদিও সম্প্রতি ২১.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছিল শেয়ার।
বৃহস্পতিবার ৫.৫২ শতাংশ দর বেড়ে ১৯.১০ টাকায় লেনদেন হতে দেখা গেছে কোম্পানিটির শেয়ার। এসময় ৫৩ হাজার ৫৯০টি শেয়ার লেনদেন হতে দেখা গেছে।
জিল বাংলা সুগার মিলস
৬ কোটি টাকা মূলধনধারী জিলবাংলা সুগারের পুঞ্জিভূত লোকসান ২৩৭ কোটি ২ লাখ টাকা। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিটি ব্যবসায়িক লোকসানে রয়েছে একযুগেরও বেশি সময় যাবত। কিন্তু সম্প্রতি অব্যাহত উত্থানে রয়েছে শেয়ার দর। ১৩ নভেম্বর জিলবাংলা সুগারের শেয়ার দর ছিল ৫৬.৩ টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার তা ৭২.৮ টাকায় স্থিতি পেয়েছে। অর্থাৎ এসময় দর বেড়েছে ২৯.৩০ শতাংশ।
এদিকে, চলতি হিসাব বছরের (২০১৭-১৮) প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১৫.৬২ টাকা।
জুট স্পিনার্স
১ কোটি ৭০ লাখ টাকা মূলধনধারী জুট স্পিনার্সের পুঞ্জিভূত লোকসান ২৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ৩০ জুন ২০১৭ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ৪৯.৩৯ টাকা। কিন্তু টানা উত্থানে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬২.৭২ শতাংশ।
গত ৮ নভেম্বর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৭৬.২ টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৪ টাকায় স্থিতি পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানির ব্যবসায়িক দুরাবস্থায় বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড না দিতে পারলেও শেয়ার দর বাড়ছে, বিষয়টা সন্দেহজনক। এ ধরণের লোকসানি কোম্পানির দর বাড়ার পেছনে কারসাজি চক্রের সক্রিয়তা থাকতে পারে।
তিনি বলেন, এ কোম্পানিগুলোর অধিকাংশের মূলধন ও শেয়ার সামান্য। যার সুফল ভোগ করছে কারসাজি চক্র। শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় বাজারে বিক্রয় উপযোগী শেয়ারও কম থাকে। তাই একটি গ্রুপ ধীরে ধীরে শেয়ার ক্রয় করে শেয়ারের সংকট সৃষ্টি করে কারসাজির সূচনা করে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ