২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:২২

রপ্তানি কমে যাওয়ায় বিপাকে গলদা চিংড়ি চাষিরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

আন্তজার্তিক বাজারে রপ্তানি কমে যাওয়ায় সঠিক দাম পাচ্ছে না জেলার গলদা চিংড়ি চাষিরা। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে রপ্তানিজাত গলদা চিংড়ির দাম অর্ধেক নেমে এসেছে। গলদা চিংড়ি ব্যবসায়ী ও মৎস্য সংশ্লিষ্টরা বলছে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে গলদার দাম কমে গেছে। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ১১ হাজার ৬৩০টি রেজিস্ট্রেশনকৃত ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৮টি, তালায় ৬ হাজার ৪৫০টি, দেবহাটায় ৫২৫টি, কলারোয়ায় ৪৭৫টি, কালিগঞ্জে ১২৫টি, আশাশুনিতে ৮১৯টি ও শ্যামনগরে ২১৮টি।

এবার সবচেয়ে বেশি তালা ও সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় চাষ করা হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার চাষী সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে এবার গলদা চিংড়ি চাষ করেছে। সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মৌসুমে ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গলদা উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে জেলায়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রইচপুর গ্রামের গলদা চাষি মোস্তফা জানান, চলতি মৌসুমেও ৪০ বিঘা জমির ঘেরে গলদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত এক দশক ধরে রপ্তানিজাত গলদা চিংড়ি করে আসছেন। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার উৎপাদনও খুবই ভালো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, গত দুই বছর আগেও বছর বাজারে যে গলদা চিংড়ি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তা এবার বাজারে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে সঠিক দাম না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাচবে কিনা তা নিয়ে রীতিমত শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের গলদা চাষি জালাল উদ্দীন জানান, তারা বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি গলদা চিংড়ি উৎপাদন করে আসছেন ২০ থেকে ২৫ বছর দরে। চলতি মৌসুমেও ২৫ বিঘা পরিমাণ জমিতে গলদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গলদা চিংড়ি বাজারে বিক্রিও শুরু করছেন ১৪/১৫ দিন ধরে। কিন্তু বাজারে চাহিদা না থাকায় সল্প মুল্যে এই রপ্তানিজাত গলদা চিংড়ি বিক্রি করছেন।

প্রতি কেজি গলদা চিংড়ি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানান। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুর রব জানান, গত দুই দশকের মধ্যে গতবছর এবং চলতি মৌসুমে গলদা চিংড়ির দাম সর্বনিম্ন যাচ্ছে। তিনি বলেন, চাষিদের রক্ষা করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন করে আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করতে হবে গলদা চিংড়ির। তিনি আরো বলেন, ২ বছর আগেও যে গলদা চিংড়ি বাজারে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে তা গেল মৌসুম থেকে বর্তমান বাজার দর ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম জানান, রপ্তানিজাত চিংড়ি হিসেবে বাগদার চেয়ে গলদা চাষে ঝুঁকি কম থাকায় চাষিরা ব্যাপক হারে উৎপাদন করছেন। কারণ এটি লোনা ও সাধু পানির পাশাপাশি পুকুর, ডোবা ও বিলসহ যে কোনো জলাশয়ে উৎপাদযোগ্য। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলেন জানান তিনি। মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (খুলনা অঞ্চল) এটিএম তওফিক মাহমুদ জানান, গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায় চাহিদা না থাকার পাশাপাশি অপদ্রব্য পুশ করা।

তিনি বলেন, প্রায় গত ২ বছর ধরে ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা যাওয়ার কারণে তারা ব্যয়বহুল পণ্য সামগ্রী আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে গলদা চিংড়ি ইউরোপে অন্তত ৭০ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে। এছাড়া আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রপ্তানিজাত চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশি গলদা চিংড়ি গুণগতমান নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে ইউরোপ আমেরিকার বাজারে মাছটির চাহিদা মারাত্মকভাবে ধস নেমেছে।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :নভেম্বর ১৮, ২০১৭ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ