দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম-বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার পরের বছরের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে গত বছর। এফবিআইয়ের ডাটা বিশ্লেষণের পর পিউ রিসার্চ সেন্টারের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে আমেরিকায় ইসলাম-বিরোধী হামলার ঘটনা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে ৩০৭টি হামলার ঘটনা রেকর্ড হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে। এসব ঘটনায় হতাহত হয় ১৪৪ জন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯১টি এবং হতাহত হয় ১২০ জন। অপরদিকে ২০০১ সালে হামলার ঘটনা ঘটে ৯৩টি। তবে হতাহতের সংখ্যা ছিল ২৯৬।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, শুধু হত্যাযজ্ঞ কিংবা মুসলমানদের ওপর শারীরিকভাবে আক্রমণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই ধর্মীয়-বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড। এখন মসজিদে আগুন কিংবা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। এমনকি মুসলিম অধ্যুষিত জনপদে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তাও লিখে রাখা হচ্ছে। ২০১৫ সালে মসজিদে হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে ৭০টি। গত বছর তা বেড়ে ৯২টি হয়েছে। এদিকে এফবিআইয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের চেয়ে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে হেইট ক্রাইম বেড়েছে ৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে ৬১২১টি হেইট ক্রাইমের মামলা হয়েছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৮১৮টি।
তবে আরও অনেক ক্রাইমেরই রিপোর্ট না হওয়ায় সে সব তথ্য অজানাই রয়ে যায় বছরের পর বছর ধরে। এফবিআইয়ের ডাটা অনুযায়ী, ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলা বেড়েছে সারাদেশে। মুসলমান, জুইশ এবং এলজিবিটি সম্প্রদায়ের ওপর বিদ্বেষমূলক হামলা অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে এটর্নী জেনারেল জেফ সেশন্স বলেন, ধর্ম, জাতি, বর্ণ এবং লিঙ্গের কারণে কেউ আক্রান্ত হবে-এটি মেনে নেয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সকলের অধিকার নিশ্চিত করেছে। গত বছর ১৫৩৮টি হামলার ঘটনা ঘটে জুইশদের ওপর। মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলার সংখ্যা দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে। বর্ণের কারণে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২২৯ জন। ১২৫৫টি ঘটনা ঘটেছে এলজিবিটির বিরুদ্ধে।
এদিকে, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর নিউইয়র্ক সিটিতে হেইট ক্রাইমের ঘটনা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১৪২টি ক্রাইমের রিপোর্ট হয়েছে সিটির ৫ বরোতে। সর্বশেষ, গত রবিবার সকালে ব্রুকলীনে সানসেট পার্ক এলাকার দুটি মসজিদে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ উভয় ঘটনাকে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক ক্রাইম হিসেবে তদন্ত শুরু করেছে। কারণ, আশপাশের আর কোথাও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। দুর্বৃত্তটি সরাসরি মসজিদে গিয়ে ভিডিও ক্যামেরা এবং জানালা ভাংচুর করেছে।
এদিকে, ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকল নাগরিকের নিরাপত্তায় নিউইয়র্কের পুলিশ বাহিনী সচেষ্ট রয়েছে বলে পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নীল বলেছেন। গতকাল শুক্রবার নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা মুসলিম মেন্টারে জুমআর নামাজে জড়ো হওয়া মুসল্লিদের এক সমাবেশে পুলিশকে ইমিগ্র্যান্টদের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘সকল ধর্মীয় মানুষদের নিরাপত্তায় বদ্ধপরিকর এই সিটির পুলিশ। এ ব্যাপারে সকল সহায়তা অব্যাহত থাকবে। ’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি