লাইফ স্টাইল ডেস্ক:
মাথার ত্বকের শুষ্কতা অথবা সেবোরেইক ডার্মাটাইটিসের মতো চর্ম অবস্থার কারণে খুশকি হতে পারে। একজিমা, সোরিয়াসিস কিংবা ম্যালাসিজিয়া নামক ইস্ট সদৃশ ফাঙ্গাসের অতিবৃদ্ধির কারণেও এটি হতে পারে।
ড্রাগস্টোর ড্যানড্রাফ রিমেডিতে শ্যাম্পুর সঙ্গে পাইরিথিওন থাকতে পারে- যার টার্গেট হচ্ছে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া, কেটোকোনজোল থাকতে পারে- এটাও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে ফাইট করে, কোল টার ও সেলেনিয়াম সালফাইড থাকতে পারে- যা মাথার ত্বক কোষের বৃদ্ধি মন্থর করে এবং এ কোষের ক্ষতি করে বা মৃত্যু ঘটায় এবং স্যালিসিলিক অ্যাসিডও থাকতে পারে- যা ফ্লেক বা খুশকি আলগা করে- যার ফলে মাথা ধুলে ফ্লেক দূর হয়ে যায়।
বিরক্তিকর সাদা খুশকি থেকে মুক্তি পেতে ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু এড়িয়ে যেতে পারেন এবং এ প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায়গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
১. অ্যাসপিরিন :
অনেক মেডিক্যাটেড ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুতে থাকা সক্রিয় উপাদান, স্যালিসিলিক অ্যাসিড, অ্যাসপিরিনেও থাকে। খুশকি নিয়ন্ত্রণে আনতে- দুইটি অ্যাসপিরিনকে চূর্ণ করে সূক্ষ্ম পাউডারে পরিণত করুন এবং আপনি চুল ধোয়ার সময় যে স্বাভাবিক পরিমাণ শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তার সঙ্গে অ্যাসপিরিন পাউডার মিশিয়ে নিন, আপনার চুলে এ মিশ্রণ ১/২ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং তারপর সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করে আবার মাথা ধুয়ে ফেলুন।
২. টি ট্রি অয়েল :
এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, শ্যাম্পুর সঙ্গে ৫ শতাংশ টি ট্রি অয়েলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে খুশকির তীব্রতা কমায়। আপনি সাধারণত যে পরিমাণ শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল যোগ করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, টি ট্রি অয়েল কিছু অপ্রীতিকর অবস্থার প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে।
৩. বেকিং সোডা :
ড্যানড্রাফ রিমেডি বা খুশকি প্রতিকারে বেকিং সোডা খুব কার্যকর। আপনার চুলকে ভেজান এবং তারপর একমুঠো বেকিং সোডা আপনার স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকে ঘষুন। শ্যাম্পু পরিহার করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডা খুশকি উৎপাদনকারী অতিসক্রিয় ফাঙ্গি হ্রাস করে। প্রথমদিকে আপনার চুল শুকনো থাকতে পারে, কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর আপনার স্ক্যাল্প প্রাকৃতিক তৈল উৎপাদন শুরু করবে- যা আপনার চুলকে নরম করবে এবং আপনাকে খুশকিমুক্ত রাখবে।
৪. অ্যাপল সিডার ভিনেগার :
ডা. মেহমেৎ ওজ ড্যানড্রাফ রিমেডির জন্য অ্যাপল সিডার ভিনেগারের ওপর জোর দিয়েছেন, কারণ অ্যাপল সিডার ভিনেগারের অ্যাসিডিটি স্ক্যাল্পের পিএইচ পরিবর্তন করে স্ক্যাল্পকে ইস্ট বিকাশের জন্য কঠিনতর করে তোলে। একটি স্প্রে বোতলে এক-চতুর্থাংশ কাপ অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সঙ্গে এক-চতুর্থাংশ কাপ পানি মিশান এবং এ মিশ্রণ আপনার স্ক্যাল্পে স্প্রে করুন। একটি টাওয়েল দিয়ে আপনার মাথা মুড়িয়ে নিন এবং ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দুইবার অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করুন।
৫. মাউথওয়াশ :
খুশকি থেকে প্রতিকার পেতে- আপনার নিয়মিত ব্যবহার করা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন এবং তারপর অ্যালকোহল-ভিত্তিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এরপর রেগুলার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। মাউথওয়াশের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রপার্টি খুশকি সৃষ্টিকারী ইস্টের বিকাশ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৬. কোকোনাট অয়েল :
ক্রাঞ্চিবেটি ডটকমের মতে, কোকোনাট অয়েল বা নারকেল তেল খুশকি প্রতিকারে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গোসলের পূর্বে, ৩/৫ চা-চামচ নারকেল তেল আপনার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন এবং প্রায় একঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। আপনি নারকেল তেল সমৃদ্ধ শ্যাম্পুও ব্যবহার করতে পারেন।
৭. লেবুর রস :
খুশকি থেকে মুক্তির জন্য আপনি লেমন বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন। ২ চা-চামচ লেবুর রস আপনার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তারপর ১ চা-চামচ লেবুর রস ১ কাপ পানিতে মিশান এবং এ মিশ্রণ দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে নিন। খুশকি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এরকম করুন। লেবুর অ্যাসিডিটি স্ক্যাল্পের পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যার ফলে খুশকির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
৮. লবণ :
খুশকি দূরীকরণের জন্য চুলে শ্যাম্পু ব্যবহারের পূর্বে সাধারণ লবণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়, কারণ লবণের খুশকি দূর করার ক্ষমতা আছে। সল্টশ্যাকার থেকে কিছু লবণ আপনার স্ক্যাল্পে ফেলুন এবং স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন। এবার শ্যাম্পু দিন।
৯. অ্যালোভেরা :
উপরে উল্লেখিত সকল ড্যানড্রাফ রিমেডি খুশকি দূর করে, কিন্তু এসবের চেয়ে দ্বিগুণ কাজ করে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী- কারণ এটি ‘ইচ-ফাইটার’, অর্থাৎ চুলকানির বিরুদ্ধে এটি ফাইট করে। শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে স্ক্যাল্পে অ্যালোভেরা ম্যাসাজ করুন, কিন্তু ম্যাসাজের পূর্বে স্ক্যাল্পে চুলকাবেন না। অ্যালোভেরার শীতলকারী প্রভাব চুলকানি উপশম করবে।
১০. রসুন :
রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি খুশকি-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করার জন্য পারফেক্ট। রসুন পিষে স্ক্যাল্পে ঘষুন। রসুনের ঘ্রাণ দূর করতে হিল উইথ ফুড ডট ওআরজির পরামর্শ হচ্ছে, মাথা ধোয়ার পূর্বে পিষিত রসুনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।
১১. অলিভ অয়েল :
সারারাতব্যাপী অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলে স্ক্যাল্প সিক্ত রাখা হচ্ছে, পুরুষদের ড্যানড্রাফ রিমডি। প্রায় ১০ ফোঁটা অলিভ অয়েল আপনার স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন এবং একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে সারারাত ঢেকে রাখুন। সকালে আপনার রেগুলার শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে ফেলুন। আরো দ্রুত ফলাফলের জন্য অলিভ অয়েল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ