নিজস্ব প্রতিবেদক:
রবিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় দেয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দিয়েও পথে পথে আমাদের নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে। আমি নিজেও বাধার মুখে এখানে পৌঁছেছি। এদের (আওয়ামী লীগ) এতটাই ছোট মন। এরা যে ছোট মনের তা আজ আবারও প্রমাণ করে দিলো। এত ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা যায় না।’
সমাবেশে উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শুধু কি তাই। শুধু তাই নয়। আপনাদের মতো আমিও বাধার মুখে পড়েছি। আমিও যাতে আপনাদের সামনে পৌঁছাতে না পারি সেজন্য আমার বাড়ির সামনে থেকে গুলশান পর্যন্ত বাস দাঁড় করিয়ে রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। অথচ বাসের ভেতর ড্রাইভার নেই। এদের (আওয়ামী লীগ) মনমানসিকতা আজ আবারও প্রমাণ হলো জাতির সামনে।’
সমাবেশকে ঘিরে সরকারের অপতৎপরতার কঠোর সমালোচনা করে বেগম জিয়া বলেন, ‘জনসভা যাতে না হয়, জনগণ যাতে না আসতে পারে তার জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পাবলি টান্সপোর্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যাতে জনগণ সমাবেশে আসতে না পারে। বিএনপি যাতে সমাবেশ করতে না পারে।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, হাসিনার অধীনে এদেশে কোনও দিন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সেটি সম্ভবও নয়। যারা সামান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনেই ভোট চুরি করে জিততে চায় তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের মতো বৃহৎ দায়িত্ব কোনওভাবেই নিরপেক্ষ হতে পারে না। ’এসময় তিনি ইভিএম বাতিলের পাশাপাশি নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও জোর দাবি জানান।
বিএনপির রাজনীতিকে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জনবিচ্ছন্ন আওয়ামী লীগ ৭ নভেম্বর ও জনগণকে ভয় পায়। তারা অঘোষিত বাকশালকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। যারা এই অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরই তুলে নিয়ে গুম করে ফেলা হয়।’
বিরোধী দলের ওপর হামলা-মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কতজনের নামে মিথ্যা মামলা, জেলখানা বিএনপির লোক দিয়ে ভরা। অথচ আজ আওয়ামী লীগের লোকেরা গুম খুন করেও দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মাফও পেয়ে যাচ্ছে। জনগণ ফুঁসে উঠছে। আওয়ামী লীগকে এই গুম খুন হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
“বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে চাকুরি না দিয়ে ঘরে ঘরে বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। উন্নয়নের নামে চলছে লুটপাট। প্রতি পদে পদে অত্যাচার নির্যাতন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া নাই”- যোগ করেন তিনি।
বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বেগম জিয়া বলেন, ‘দেশে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই। প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। শুধু তাই নয় তাকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করা হয়েছে।’
দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিনিয়ত প্রতি পদে পদে দুর্নীতি। দুদুক পড়ে আছে বিএনপির পেছনে। অথচ যারা দুর্নীতি করছে তাদের দিকে চোখ পড়ে না দুদকের। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা কারসাজি করে কারা বিদেশে পাচার করেছে দেশবাসী তা জানে। তবু দুদক চুপ হয়ে আছে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশে গুম খুন হত্যা চলতেই থাকবে। আমরা রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন চাই, ঐক্যের রাজনীতি করতে চাই।’
এসময় চলমান রোহিঙ্গা সমস্যাকে ভোটারবিহীন সরকার নয় দেশের জাতীয় সমস্যা বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর এই জাতীয় সমস্যা মোকাবিলায় ভোটারবিহীন এই অবৈধ সরকার চুপ থাকলেও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি জোর আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিতি ছিলেন- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর