অনলাইন ডেস্ক:
গ্রীন টি বা সবুজ চা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ৪ হাজার বছর পূর্বে চীনে মাথা ব্যথার ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হলেও সময়ের ব্যবধানে সারা বিশ্বে এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়।সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বয়স্ক যেসব মহিলা সবুজ চা পান করেন- তাদের যকৃত, মলাশয়, পাকস্থলী, স্তন ও কণ্ঠনালীর ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কম।
এক দশকের বেশি সময় ধরে (১১ বছর) ৬৯ হাজার ৩১০ জন চীনা মহিলার ওপর পরিচালিত এক সমীক্ষায় এই তথ্য পেয়েছেন একদল গবেষক। গ্রীন টি মোটা মানুষের জন্য খুবই উপকারী স্লিম হওয়ার জন্য। প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট আছে। ত্বক চুলের জন্য ভাল।
দাঁতের ক্ষয়রোধে এরচেয়ে ভাল জিনিষ আর মনে হয় নেই। ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে। হার্টের অসুখ কমায়।
এছাড়া রক্তে ক্লোস্টরেল কমায়। ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোক কমায়। আরো বেশ কিছু উপকার আছে। একটি মাত্র সমস্যা হতে পারে। বেশি পান করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
গ্রীন টি বা সবুজ চা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
উপকারি।১৯৯৪ সালে Journal of the National Cancer Institute থেকে প্রকাশিত জার্নাল এ বলা হয়, সবুজ চা পানে ৬০% ক্যান্সার ( ইসোফেজিয়াল) দূর করা সম্ভব হয়েছে চীনাদের ক্ষেত্রে। University of Purdue এর গবেষকরা আবিস্কার করেন সবুজ চা ক্যান্সার কোষ প্রজনন প্রতিরোধ করে। আরো কিছু গবেষনায় জানা যায়, সবুজ চা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল লেভেলের পরিমান কমিয়ে দেয়। সবুজ চা এর প্রধান
ক্যারিশমাটা হলো এর একটা উপাদান epigallocatechi nallate (EGCG) যা একটি শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ ট। EGCG কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শরীরের ক্যান্সারকোষ প্রজনন ক্ষমতা একদম নষ্ট করে ফেলে।
গ্রীন টির আরও কিছু উপকারিতা:
১. গ্রীন টি ওজন কমাতে খুব-ই উপকারী।
২. গ্রীন টি কিডনি রোগের জন্য উপকারী।
৩. গ্রীন টি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
৪. গ্রীন টি পান করলে রক্তের প্রবাহ ভালো হয়
এবং ধমনী শিথিল হয়।
৫. গ্রীন টি রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা কমায়।
৬. গ্রীন টি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
৭. এর লিকার দাঁতের য়রোধ ও মাড়ি শক্ত করে।
৮. কাটা জায়গায় গ্রিন টির লিকার লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ
হয়।
৯. ক্ষতিকর আল্ট্রা-ভিওলেট রশ্মী থাকে রক্ষা করে।
১০. গ্রীন টি এন্টি-এজিং ক্ষমতা সম্পন্ন ।
১১. পোকামাকড় কামড়ালে যদি ওই স্থান চুলকায় ও ফুলে যায়
তাহলে সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ হয়।
১২. গ্রীন টির ভিটামিন সি সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে।
১৩. নিয়মিত গ্রহণে ব্রন প্রতিরোধ করে।
১৪.জাপানের একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে গ্রীন টির epigallocatechin-3-gallate (EGCG), সুস্থ্য কোষের সঙ্গে HIV এর সংযোজন ব্যহত করে। ফলে AIDS এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।Camellia Sinensis পাতাকে বিশেষ প্রক্রিয়াজাত করেগ্রীন টি বা সবুজ চা উৎপাদন করা হয়। ঠিক ব্ল্যাক টি (আমরা যেটা খাই) এর মত। এটার সামান্য একটা দূর্বল দিক হলো, এটাতে সামান্য পরিমানে একটু ক্যাফেইন থাকে যা ব্ল্যাক টি এর ক্যাফেইন এর মত শরীরের জন্য এত মারাত্বক বা ক্ষতিকর নয়। তবে এর রোগ প্রতিরোধের কার্যকারিতার দিকে তাকালে অনায়াসেই এই দুর্বলতা বাদ দেয়া যায়। বাংলাদেশের বড় যে কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই এর দেখা মিলবে।
কিডনি, ডায়াবেটিস ও মূত্রনালীর ইনফেকশন এগুলোর জন্য দিনে সাধারনত ৩ লিটার পানি খেতে ডাক্তাররা পরামর্শদেন। পরামর্শ হলো, ৩ লিটার পরিমান গরম পানিতে কিছু পরিমান সবুজ চা পাতা বা একটা সবুজ টি প্যাকেট ছড়িয়ে দিন। পানি ঠান্ডা হলে প্রতি ২ ঘন্টায় ১ গ্লাস করে পানি পান করুন। এই ভাবে দিনে ১২ গ্লাস পানিশরীরের জন্য বেশ উপকারি বিশেষ করে কিডনি, ডায়াবেটিস ও মূত্রনালীতে ইনফেকশন আছে এমন রোগীদের জন্য। তবে,
সাধারণ লোকদের জন্য পরামর্শ হলো, দৈনিক ৪ গ্লাস বা ১ লি. সবুজ চা ।তাই দেরী কেন, বেশি করে সবুজ চা পান করুন স্বাস্হ্য ভালো রাখুন!
উপকরণ: পানি পরিমান্মত, এলাচি- খোসা ৪টা, পুদিনা পাতা ২টা, আদাকুচি ১ টেবিল-চামচ, মৌরি ১ চা-চামচ,দারচিনির গুঁড়া ১ চা-চামচ। জিরা ১ চা চামচ, গ্রীন চা-পাতা ৩-৫ চা-চামচ। মধু ও লেবুর রস। প্রণালী: বড় পাত্রে ওপরের সব উপকরণ (চা-পাতা ছাড়া) একসঙ্গে মিলিয়ে চুলায় দিয়ে ২-৩টা বলক তুলে নিতে হবে। এখন চা-পাতা দিয়ে নেড়ে আবার ২-৩টা বলক তুলে চুলা বন্ধ করে ঢেকে রাখতে হবে। পাঁচ মিনিট পর ছেঁকে গরম গরম পরিবেশন।
১৫. গ্রীন টি ইমিউন সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করে৷ তবে এই চা নিয়মিত পান করতে হবে৷ গ্রিন টির উপকারিতা অনেক, গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি, বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ক্যাফেইন ও মেঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও বিভিন্ন মিনারেল যা প্রতিটি মানুষের শরীরেই প্রয়োজন ৷
১৬. এনজিওটেনসিন নামক যে উপাদানটি হাই প্রেশারের জন্য দায়ী, গ্রীন টি তা নিয়ন্ত্রন করে প্রেশার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
১৭. গ্রীন টি মেটাবলিসম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্নে সহায়তা করা। অর্থাৎ ওজন কমায়। একদিনে গ্রীন টি ৭০ ক্যালরি বার্নে সহায়তা করে যা প্রায় ২০ মিনিট হাটার সমান ক্যালরি।
১৮. গ্রীন টি ফ্যাট সেল গুলোতে গ্লুকোস ঢোকা বন্ধ করে দেয়। সুতরাং কারো যদি খাদ্যাভাস ও লাইফস্টাইল হেলদি হয় ও নিয়মিত গ্রীন টি গ্রহণ করে, তবে মেদ বৃদ্ধি হবেনা।
১৯. গ্রীন টি মেটাবলিসম বাড়িয়ে রক্তে আকস্মিক গ্লুকোস বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রন করে। এর ফলে ডায়বেটিস রোগীদের অবস্থার উন্নতি ঘটে।
২০. গ্রীন টির একটি এমাইনো এসিড স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এ ভূমিকা রাখে।
২১. এটি লিভার ফেইলিওর এর রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পরের জটিলতা রোধ করে। তাছাড়া ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করে ফ্যাটি লিভার এর রোগীর লিভারের উন্নতি ঘটায়।
২২. গ্রীন টি তে থাকে ক্যাটেচিন ফুড পয়জনিং এর জন্য দায়ী ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং এই ব্যাকটেরিয়া হতে জাত টক্সিন কে নষ্ট করে দেয়।
২৩. গ্রীন টি rheumatoid arthritis এর চিকিতসায় ব্যবহৃত হয়। এটি জয়েন্ট এর cartilage ক্ষয়কারী এনজাইম কে রোধ করে জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করে।
২৪. গ্রীন টি multiple sclerosis এর চিকিতসায় ব্যবহৃত হয়।
২৫. গ্রীন টির পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ ভাইরাল ও ব্যকটেরিয়াল ডিজিজ গুলো প্রতিরোধ করে।
২৬. গ্রীন টির ভিটামিন সি সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে।
২৭. গ্রীন টির epigallocatechin-3-gallate (EGCG) এলার্জি নিরাময়ে সহায়তা করে।
২৮. গ্রীন টির থিওফাইলিন শ্বাসতন্ত্রের মাসল কে রিল্যাক্স করে এজমার অবস্থার উন্নতি ঘটায়।
২৯. প্রাচীন চীনে কানের ইনফেকশন এর চিকিতসায় গ্রীন টি দিয়ে তুলো ভিজিয়ে কান পরিষ্কার করা হতো।
৩০. হার্পিস এর চিকিতসায় যে ক্রীম (ইন্টারফেরন) ব্যবহৃত হয়, গ্রীন টি তার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর জন্য আগে স্থানটি গ্রীন টি দিয়ে ধুয়ে এরপর ক্রীম লাগাতে হবে।
৩১. জাপানের একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে গ্রীন টির epigallocatechin-3-gallate (EGCG), সুস্থ্য কোষের সঙ্গে HIV এর সংযোজন ব্যহত করে। ফলে AIDS এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩২. এছাড়াও গ্রীন টি এনার্জি ও স্ট্যামিনা বাড়ায়
৩৩. হজমে সহায়তা করে
৩৪. পানিশূন্যতা রোধ করে
৩৫. নিয়মিত গ্রহণে ব্রন প্রতিরোধ করে
৩৬. রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোক হওয়াকে রোধ করে
৩৭. এতে থাকা কিছু ভিটামিন ক্ষতস্থানের অস্বাভাবিক রক্তজমাট বাধা কে প্রতিরোধ করে
রূপচর্চা ও স্বাস্থ্যরক্ষায় গ্রীন টি
গ্রীন টি’র সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। তবে একে অন্য সব সাধারণ পানীয়ের কাতারে ফেললে আপনি ভুল করবেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত গ্রীন টি পান বার্ধক্যের ছাপকে ঘুচিয়ে ত্বকের জৌলুস ফিরিয়ে আনে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। এছাড়াও গ্রীন টি তে রয়েছে আরো অসংখ্য গুনাগুণ। এমনকি গ্রীন টি তে থাকা এই উপকারী গুণ গুলোর জন্য এখন বিখ্যাত বিউটি ব্র্যান্ড গুলো তাদের পণ্যে গ্রীন টির উপাদান সংযোজন করছে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর