নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেছেন। বিচারক এই মামলায় সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে রায় দেবে বলেও আশাবাদী তিনি। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশী বাজার আলীয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে চতুর্থ দিনের বক্তব্যে বিএনপি প্রধান এ কথা বলেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার বক্তব্য চলছিল। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার আগের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট এই মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়ে। এতে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও তার ছেলে তারেক রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়। এই মামলা ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে এবং আরও বেশ কয়েকজন আসামির বিরুদ্ধে চলছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট এই মামলাও করে দুদক। এতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়। দুটো মামলাই পুরান ঢাকার বিশেষ আদালতে চলছে সমান্তরালে।
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগপত্র জমা পড়ার প্রায় আট বছর পর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামি এবং সাক্ষীদের জেরা শেষ হয়েছে। এখন চলছে আত্মপক্ষ সমর্থনে বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য। গত ১৯ অক্টোবর প্রথম দফা, ২৬ অক্টোবর দ্বিতীয় দফা এবং গত ২ নভেম্বর তৃতীয় দফায় বক্তব্য রাখেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তবে এই তিন দিনের বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন মামলার বিষয়ে তেমন কোনো কথা না বলে রাজনীতি নিয়েই কথা বলেন। অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার তার ও তার দলের ওপর নির্যাতন চলছে। আজও তার বক্তব্যে মামলার বিষয়বস্তু তেমন একটা নেই।
এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়া দুইবার অনাস্থা জ্ঞাপনের পর বিচারক পাল্টে দেয়া হয়েছে। এই মামলায় এখন বিচারক হিসেবে রয়েছেন আখতারুজ্জামান। বিচারককে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনি সাহস ও সততার সঙ্গে সরকারের প্রভাব মুক্ত থেকে আইন অনুযায়ী ন্যায় বিচার করবেন।’ ‘আমাদের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন করা হলেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদাহরণ সেই দাবিকে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করছে।’ কেউ কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন। কেউ শিক্ষা নেন না মন্তব্য করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘যারা শিক্ষা নেন তারা সম্মানীত হন। আর যারা শিক্ষা নেন না তাদের জায়গা হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী। বলেন, আজ যারা ক্ষমতায় আছে সেই আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, একসময়কার ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত ইসলামী মিলে দেশে কি ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তা আপনি জানেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের নামে কি সহিংস হানাহানি ও নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করেছিল, তা সকলেই জানেন।’ ‘দিনের পর দিন হরতাল, অবরোধে তারা জনজীবনকে অচল করে দিছে। রেলস্টেশন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’
এই মামলায় আদালতে আজ জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনও জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। পরে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে ১৬ নভেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি