দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
সৌদি যুবরাজ দেশটিতে ‘দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে তার প্রভাব যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, কাতার, তুরস্ক ও লেবাননসহ বিশ্বের অনেক দেশের ওপর পড়েছে। সৌদি আরবে এই ধরপাকড়ের নজিরবিহীন ঘটনার পর হঠাৎ লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি দেশটিতে উপস্থিত হয়ে তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর ফিলিস্তিনের নেতা মাহমুদ আব্বাসকে রিয়াদে তলব করা হয়। ৩২ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান দেশে ও দেশের বাইরে উভয় ক্ষেত্রে তার নিয়ন্ত্রণ সংহত করার চেষ্টা করছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড আগে থেকেই গোলযোগপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মোহাম্মাদ বিন সালমান সৌদি আরবের ওপর তার কর্তৃত্ব সংহত করার সাথে সাথে তিনি অন্যান্য দেশের নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা পালন করতে চান। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও বাইরের শক্তিধর কারো মদদ ছাড়া তরুণ যুবরাজের পক্ষে তার এই নীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। দৃশ্যত তিনি এমন একজন সমর্থক পেয়ে গেছেন, তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বাদশাহ সালমানের সাথে ফোনালাপে দেশটির শুদ্ধি অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। চড়ামূল্যে ট্রাম্পের এ সমর্থন পাওয়া গেছে। মাত্র কয়েক দিন আগে ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা জারেড কুশনার গোপনে রিয়াদ সফর করে গেছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প এক টুইটে বলেছেন, তিনি চান দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সৌদি তেল কোম্পানি আরামকোর শেয়ার নিউ ইয়র্কের বাজারে ছাড়া হোক।
সৌদি বাদশাহর সাথে ফোন আলাপের সময়ও ট্রাম্প এই একই আহ্বান জানিয়েছেন। এটি করা হলে যুক্তরাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লন্ডন তাদের বাজারে এ শেয়ার ছাড়ার আশা করেছিল যা হয়তো তাদের ব্রেক্সিট-উত্তর অর্থনীতি ব্যাপক চাঙ্গা করতে সহায়ক হতো। এটি লাভের জন্য এত দিন ধরে থেরেসা মে ও তার মন্ত্রীরা রিয়াদের সাথে যে দেনদরবার করেছেন তা কোনো কাজে আসছে না। প্রিন্স বিন সালমানের উল্কার মতো উত্থান অব্যাহত থাকবে নাকি তিনি জ্বলেপুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবেন তা দেখার বিষয়। রাজপরিবারের বহু সদস্যকে আটক করার পর অন্য সদস্যদেরকে দেশ ত্যাগ না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আটক করার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। আটক প্রিন্সদের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রিন্স আল ওয়ালিদ বিন তালাল রয়েছেন। আটক অন্যদের মধ্যে রয়েছেন মরহুম বাদশাহ আবদুল্লাহর দুই প্রিয়ভাজন ছেলে প্রিন্স মিতআব ও প্রিন্স তুির্ক। তাদের একজন ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ও অন্যজন রিয়াদের গভর্নর ছিলেন। ধর্মীয় উত্তরাধিকার, বিশিষ্ট রক্ষণশীল ইমাম ও তাদের কঠোর সমর্থকদের বিরুদ্ধে যুবরাজের বিভিন্ন পদক্ষেপের পর এই অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটল।
সৌদি আরবের চার স্তম্ভের ওপর যুবরাজ তার দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এসব স্তম্ভ হলো : ক্ষমতাসীন রাজপরিবার, ব্যবসায়ী শেখবর্গ, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ। তার লক্ষ্য হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া এবং তিনি যে ধরনের সংস্কার চাচ্ছেন তা বাস্তবায়ন করা। মনে হচ্ছে তিনি এ ব্যাপারে আশ্বাস পেয়েছেন। হারিরির পদত্যাগের ভাষণ নিজ দেশে নয়, রিয়াদে বসে তৈরি করে তিনি সৌদি টিভিতে প্রচার করেন। তিনি ইরান ও শিয়াপন্থী হিজবুল্লাহকে লেবাননকে পণবন্দীতে পরিণত করা ও আরব জাহানকে অস্থিতিশীল করার জন্য দোষারোপ করেন।
সৌদি আরব কখনোই চায়নি যে, হিজবুল্লাহ লেবাননের ক্ষমতাসীন জোটের শরিক হোক। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পক্ষ নিয়ে সেখানে যুদ্ধ করতে ইরানি সেনাদের পাশাপাশি হাজার হাজার হিজবুল্লাহ যোদ্ধা অংশ নেয়। এ ঘটনায় সৌদি আরব ুব্ধ হয়েছে। লেবানন সরকারের পতন ঘটছে। হারিরির সমালোচকেরা বলছেন, তিনি এখন সৌদি আরবের পণবন্দী হয়ে আছেন। এখন ফিলিস্তিনি নেতা আব্বাসকে রিয়াদে যেতে বলা হয়েছে। রিয়াদ হামাসকে ইরানের প্রভাব থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারা হামাসের ব্যাপারে এখনো সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি সৌদি মদদে আব্বাস গাজায় অবরোধ আরোপ করে হামাসকে নমনীয় করে ফেলেছে। দুই পক্ষের মধ্যে ‘সমঝোতা’ হয়েছে। প্রিন্স বিন সালমান সম্প্রতি হামাস প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেছেন। তারা চায়, হামাস এমন নীতি গ্রহণ করবে যা সৌদিদেরকে খুশি করে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিন সালমান ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরুতে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেন। এটি এক বিপর্যকর সিদ্ধান্ত। এ যুদ্ধে তাদের জয়ের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তেমনিভাবে কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বের অবরোধও ব্যর্থ হতে চলেছে। এতে কাতার ইরান ও তুরস্কের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি