নিজস্ব প্রতিবেদক:
নবী করিম (সা.) মাহে রমজানে রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন-যারা নিজ পরিবারবর্গসহ সন্তুষ্টি সহকারে রমজানের ৩০টি রোজা রাখবে, হালাল বস্তু দ্বারা ইফতার করবে আল্লাহ তাআলা তাদের ওই প্রকার মূল্য দান করবেন, যেমন তারা মক্কা ও মদিনা শরীফে রোজা রেখেছে।
আল্লাহপাক হজরত মুসা (আ.)কে একদা বলেছিলেন, হে মুসা! যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখবে আমি তার আমল নামায় মানুষ, জ্বিন, পরী ও সব জীব জন্তুর পূণ্যের সওয়াব লিখে দেব। মহানবী (সা.) বলেছেন , যে ব্যক্তি এই মাসে একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে তার (সগীরা) গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে এবং দোজখের আগুন থেকে সে মুক্তি পাবে এবং সে সেই রোজাদারের সম পরিমাণ সওয়াব পাবে, অথচ তার রোজাদারের সওয়াবের কমতি হবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন-হে মানব গণ! তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এই মাসে নেক আমল দ্বারা আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য লাভের কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোন ফরজ আদায় করার ন্যায় কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোন ফরজ কাজ আদায় করে, অন্য সময়ে ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস, আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানরে প্রথম রাত্রি থেকে শয়তানগুলোকে বন্দি করা হয় এবং অবাধ্য জ্বীনগুলোকে আবদ্ধ রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়, সারা রমজান মাসে তা আর খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, সারা রমজান মাসে তা বন্ধ করা হয় না।
হাদিস শরীফে বণির্ত আছে যে, নবী করিম (সা.) ফরমান, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখে এবং এর রাত্রিগুলাতে ঈমান ও ইতিকাবের সঙ্গে ইবাদত বন্দেগী করে, সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে। হাদিস শরীফে আরও উল্লেখ আছে যে, রমজান মাস রহমত, বরকত, গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের মাস। এই পবিত্র মাসে ফেরেশতাগণ মানুষের উদ্দেশে প্রতিদিন বলেন, হে কল্যাণ কামনাকারী! আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ করো, তার ইবাদত বন্দেগীতে রত হও এবং একনিষ্ঠ মনে তওবা কর। তোমরা এই মাসে যা কামনা করবে ও প্রার্থনা করবে,আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন।
মাহে রমজানরে একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম্য হচ্ছে, এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মছে দেয় এবং আত্মাকে দহন করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জীবিত করে।
সর্বোপরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এই মর্মে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজাদারের জন্য দুটি খুশি একটি হলো তার ইফতারের সময়, আর অপরটি হলো আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (বুখারী ও মুসলিম)
নবী (সা.) আরও বলেছেন- রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মেশক আম্বরের ঘ্রাণ অপেক্ষা অধিক তর পছন্দনীয়। এমনিভাবে পবিত্র কোরআন মজিদে ও হাদিস শরীফে মাহে রমজানের রোজার বহুবিধ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। বস্তুত, রোজা উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নেয়ামত, বরকত ও রহমতস্বরূপ। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত, বরকত তথা মানুষের জন্য মুক্তি, শান্তি ও মঙ্গল নিহিত রয়েছে। তাই পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ রমজান মাসে উপস্থিত (জীবিত) থাকে, তারই রোজা পালন করা কর্তব্য। (সুরা আল বাকারা আয়াত-১৮৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সবাইকে মাহে রমজানে রোজার ফজিলত, তার অপার করুণা ও রহমত সম্পর্কে উপলব্ধি করা ও , রোজা সঠিকভাবে পালনের তৌফিক দান করুন।