২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:৩৯

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনিরাপদ’

অনলাইন ডেস্ক

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত অঞ্চলের বাংলাদেশি শিশু-কিশোরীদের জীবন অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। ভারতে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলো তাদের সন্তানদেরকে পাচারের কবল থেকে বাঁচাতে অনেকেই বাল্যবিবাহের পথ বেছে নিচ্ছেন।
 ‘জাস্টিস এন্ড কেয়ার’ নামের সংস্থাটি বলছে, শিশু-কিশোরীরা পাচার হতে পারে এই আশঙ্কা করলেও পুলিশ অথবা সীমান্তরক্ষীদের না জানিয়ে ভয়ে চুপ করে থাকেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার আটটি গ্রামে সংস্থাটির চালানো এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার এ সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়। ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আটটি গ্রামের প্রায় তিনশ কিশোরী এবং প্রায় দেড়শ মায়ের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা জানাচ্ছেন, মূলত প্রলোভন দেখিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে শিশু-কিশোরী পাচার হচ্ছে।
 ওই সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক সায়ন্তনী দত্ত বলেছেন, ‘আমাদের সমীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল এটা জানার যে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পাচারের ব্যাপারে কতটা জানেন। আমরা দেখেছি তারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাচারের ব্যাপারে জানাতে চান না ভয়ে। পাচারকারী বা তাদের দালালরা ওই এলাকাতেই ঘোরে আর তারা ভীষণ ক্ষমতাবান। তাদের যদি শাস্তি না হয়, তখন যিনি খবর দিয়েছেন, তাকেও বিপদের মুখে পড়তে হবে। এই আশঙ্কাতেই চুপ করে থাকেন সবাই।’
 এছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সীমান্ত অঞ্চলটি মেয়েদের কাছে, বিশেষত কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা ছাড়াও অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। অনেক মেয়েই সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে তারা স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যেতেও ভয় পায়।
‘সমীক্ষায় দেখা গেছে যে অনেক বাবা-মা তাদের মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন যাতে তারা বিপদে না পড়ে, অর্থাৎ পাচারকারীদের খপ্পরে না পড়ে’ জানিয়েছেন সায়ন্তনী দত্ত। আবার বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা দেখেছেন যে পাচার হবার বিষয়টি তারা বুঝতেই পারেনি। কিশোরীরা অনুমান করতে পারেনি যে তাদের অন্য দেশে আনা হয়েছে।
 সায়ন্তনী দত্তর কথায়, ‘তারা হয়তো ভেবেছে বাংলাদেশেরই কোনও জায়গায় কাজের জন্য বা বিয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাতের বেলা যে তাদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা পরের দিন সকালে তারা টের পেয়েছে। কিন্তু এদেশে কার কাছে সাহায্য চাইবে, সেটা তারা জানে না।’
 বিএসএফ’র দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ইন্সপেক্টর জেনারেল পি এস আর আঞ্জানিয়েলু বলেন, ‘কারা পাচারের শিকার হয়ে আসছে, আর কারা অনুপ্রবেশ করছে- এই পার্থক্য করাটা বিএসএফ সদস্যদের কাছে খুবই কঠিন। পাচারের বিষয়ে কিছুটা জানা থাকলেও অনেক সময় আমাদের ভুল হচ্ছে, কারণ আমাদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ নেই এ বিষয়ে। সবেমাত্র এই বিষয়টা জানতে বুঝতে শুরু করেছি আমরা।’

জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাস্টিস এন্ড কেয়ারকে দিয়ে এই সমীক্ষাটি বিএসএফই করিয়েছে। সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিএসএফের প্রতি যে একটা বিরূপ মনোভাব রয়েছে, শিশুপাচার রোধ নিয়ে কাজ করলে সেই মনোভাবও কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করছে বিএসএফ। বাংলাদেশ সীমান্তের মতো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সীমান্তের গ্রামবাসীদের বিএসএফের প্রতি বিরূপ মনোভাব কাটিয়ে উঠার উপায় নিয়ে গবেষণা করতে দিল্লিতে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিবিসি।
 দেশ জনতা/এন এইচ 

প্রকাশ :মে ১৭, ২০১৭ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ