শিল্প–সাহিত্য ডেস্ক:
আমি সাহিত্য চর্চা করি না। আমি বিবেকের দংশনে
ভিসুভিয়াসের লাভা উদগীরণ করি.
জীবন থেকে কুড়িয়ে নেই
নষ্ট কবিতার শব্দ, কষ্ট পদ্যের পংক্তিমালা।
ভালোবাসা, অপমান, নিগ্রহতা খুঁজি,
ফুটপাতে, বস্তিতে, বাসস্টপ প্লাটফর্মে।
ভাষার রক্তে চেতনার মলম, টিভি সিরিয়ালের হাম-তুম
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, সিংহাসনে আরোহণে রাজদরবারে নিকৃষ্ট প্রহসন
স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে ছিনিমিনি, চেতনার নিলাম রাজনীতির বাজারে
লাল সবুজের পতাকার চোখে রক্তের অশ্রু, শুকুনের নখের তীব্রতা,
ঠোঁটের ধার ছিঁড়ে খেতে চায় সবুজ জমিনের রক্তাক্ত বুক!
বখাটেদের খুঁজি স্কুল কলেজের আঙিনায়
ছিনতাই মলমবাজ, ক্রসফায়ার দেখি
সোডিয়ামের আলোয়, নালা নর্দমায়।
কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার চোখের জল দ্বিগুণ করি কবিতায়
সন্তানহারা মায়ের আঁচলের খুটে বেঁধে দেই
প্রবাসীর আর্তনাদের উচ্ছিষ্ট চিড়া মুড়ি,
কর্মহীন দেশান্তরির কবিতার বুকে জমানো দীর্ঘশ্বাস।
অতি শিক্ষিত জ্ঞানী নই
সাহিত্যের বড় প্রত্যয়নপত্র নেই
ঐশ্বরিক শক্তি নেই মগজের ভেতর।
শুধু আছে কষ্ট যন্ত্রনা অবহেলা ব্যাভিচার
ক্ষমতার দাপট, টাকার অহংকারের চিত্র,
শাসনের হুংকার, শোষণের ভয়াবহতা, শোষিতের চিৎকার
বেকার যুবকের নষ্ট হওয়ার চিত্র
অনিরাপদ জনপদে শিশুর রক্তাক্ত নিথর দেহ
রাস্তার ধরে জমিনের মাঝে পড়ে থাকা
ধর্ষিতা নারী, নির্যাতিত পুরুষের লাশ!
মায়ের হাতে সন্তানের খুন, সন্তানের হাতে পিতার
পরকীয়ার লঙ্গরখানায় দেখি
নির্লজ্জ ভালোবাসার ভয়াল তাণ্ডব!
প্রেমের নামে কিশোরী, যুবতীর ফাঁসির দড়ি,
কিশোর, যুবকের নেশাগ্রস্ত মুখ
যুবক, বয়োজ্যেষ্ঠদের হাতে শিশু কন্যার চিবুক,
মক্তব মাদ্রাসায় বালকের বলৎকার,
শিক্ষকের পড়া টেবিলে ছাত্রীদের বুক!
লঘু নির্যাতনের নামে ধর্মের অলিখিত যুদ্ধ
সিরিয়া, লেবানন ফিলিস্তিন রোহিঙ্গা নিয়ে লিখতে
সাহিত্যে ধ্বজাধারী হতে হয় না।
প্রবাসীদের জুতাপালিশওয়ালা বললে
তার প্রতিবাদ করতে
বাংলা একাডেমির সনদ লাগে না।
গণতন্ত্রের বলৎকারের প্রতিবাদে
চাটুকার সাংবাদিক সাহিত্যিক হতে হয় না।
পত্রিকায় প্রকাশ করতে
তাবেদারি ছন্দ, ছড়া তাই লেখা হয় না।
কর্মজীবী মানুষ, কাজ করে খাই, গোলামি পেশা
ন্যায্য মজুরির দাবি করি কবিতায়।
সাহিত্যিকের প্রত্যয়নপত্র নিতে
লিখি না আমার অপাঙক্তেয় কথামালা।
ওই চেয়ারে বসে পা দুলিয়ে
বিদেশি লেখক কবির মুখস্ত করা
দু চার লাইন কপচিয়ে জাহির করি না সাহিত্য চর্চা !
আমি পড়ি, যা পাই তাই, হোক দেশি, হোক বিদেশি
আমি শুনি হিন্দি উর্দু ফার্সি ইংরেজি আরবি
কবিতা, শের, শায়েরি, পোয়েট্রি, হারিয়ে যাই কোনো এক অজানায়
মিল খুঁজি, আমার, তার তাহাদের।
লেখা দেখেই অনেকেই বলে, দূর কী লিখিছে অথচ তারাই
বিদেশি লেখার বুলি ঝড়ে ঝুড়ি, ঝুড়ি।
আমার বাংলার কবি লেখকদের
দু চারজন ছাড়া সবাইকেই হেনস্থা করা হচ্ছে !
কবি, লেখক এখন রাজনীতির কাণ্ডারি
সাহিত্যচর্চার নামে রাজনৈতিক সভা!
বড় বড় বই পড়ার সময় নেই আমার
গুগুলেই হাতড়াই ,
দেখি কী লিখছি আমি আর কী লিখছেন তারা,
আগামীর কোনো এক বাবর আলী দেখবে,
আজকের বাবর আলীর শীৎকার!
বর্তমান, বাস্তবতা আমার কবিতার রসদ
ভবিষ্যতের ইতিহাস আমার কবিতা
প্রশ্ন আর উত্তরের মাঝে দোল খায়
আমার কবিতার শব্দ মালা।
আমি সাহিত্য চর্চা করি না। আমি বিবেকের দংশনে
ভিসুভিয়াসের লাভা উদগীরণ করি।
লেখক: সিঙ্গাপুর প্রবাসী