আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন নি। তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে সৌদি আরব। এমন অভিযোগ করেছেন লেবাননের যোদ্ধা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ’র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ।
তিনি বলেছেন, সাদ হারিরিকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে এবং তাকে তা করতে বাধ্য করেছে সৌদি আরব। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।
এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি ক্ষমতায় এসেছিলেন এক বছরেরও কম সময় আগে। এরই মধ্যে তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করলো সৌদি আরব। এ ঘটনা যখন ঘটে তখন লেবাননে অবস্থানরত নিজের নাগরিকদের অবিলম্বে লেবানন ত্যাগের নির্দেশ দেয় প্রতিবেশী দেশ বাহরাইন। একই সঙ্গে তারা লেবাননে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়।
উল্লেখ্য, শনিবার অকস্মাৎ পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি। আর সেই ঘোষণা তিনি দিয়েছেন সৌদি আরবের ধারণ করা একটি টেলিভিশনের বক্তব্যে। এতে তিনি আরব বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য ইরান ও হিজবুল্লাহকে দায়ী করেন। এতে পুরো লেবানন বিস্মিত হয়। তার নিজের নেতারা হতাশায় হাবুডুবু খান। এর জবাব দিয়েছেন লেবাননের সবচেয়ে শক্তিধর নেতাদের অন্যতম হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহ। তিনি এ ঘটনার জন্য দায়ী করেন সৌদি আরবকে। পাশাপাশি পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনিতেই লেবাননের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। তার মধ্যে কোনো পূর্ব অনুমান, ঘোষণা ছাড়াই একজন প্রধানমন্ত্রীর এভাবে পদত্যাগের ঘোষণা জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। তাও আবার সেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি বিদেশের টেলিভিশনে। এতে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে দেশে হত্যা করা হতে পারে। এটাকে যুক্তির স্বার্থে সত্য ধরে নিলেও প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি কেমন একজন রাষ্ট্রনায়ক, যিনি নিজের জীবনের ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন আরেক দেশে। এখানেই প্রশ্ন! এখানেই সন্দেহের জাল ছড়িয়ে আছে। তাহলে কি সত্যিই তাকে পদত্যাগে কেউ বাধ্য করেছে! তার এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে দূরত্ব আরো বাড়বে। এপি লিখেছে, সৌদি আরবে এই সময়ে ক্ষমতা ক্রমাগত কুক্ষিগত করছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
শনিবার রাতে অকস্মাৎ একটি দুর্নীতি বিরোধী কমিটি গঠন করে তার প্রধান বানানো হয়েছে তাকে। আর তার পর পরই যুবরাজ আল ওয়ালিদ তালাল সহ আরো কমপক্ষে ১০ জন যুবরাজ, বর্তমানের ৪ জন মন্ত্রী ও সাবেক কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এসবের মাধ্যমে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতাকে নিজের হাতের মুঠোয় নিচ্ছেন। তার নেতৃত্বেই লেবাননের গলা চিপে ধরা যাবে। এটা সম্ভব হলে ইরান ও হিজবুল্লাহকে ‘সাইজে’ আনা যাবে। হাসান নাসরুল্লাহ বলেছেন, আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে কেনো সৌদি আরব জোর করে আমাদের সরকার প্রধানকে পদত্যাগ করিয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় দেশ লেবাননের অর্থনীতি নির্ভর করে উপসাগরীয় বিনিয়োগ ও পর্যটনের ওপর। তাদের বিরুদ্ধে বাহরাইন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আর্থিক অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে লেবানন। ওদিকে তেহারানের সঙ্গে দোহা উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এমন অভিযোগে কাতারের বিরুদ্ধে কার্যত অবরোধ আরোপ করেছে উপসাগরীয় সহযোগিতা বিষয়ক কাউন্সিল। তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবরোধ আসতে পারে। ফলে এটা পরিষ্কার যে, ইরানকে শায়েস্তা করতে উপ সাগরীয় দেশগুলো একজোট হয়েছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে লেবাননের বিরুদ্ধে সদস্য দেশগুলোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার হুশিয়ারি দিয়েছে উপসাগরীয় সহযোগিতা বিষয়ক কাউন্সিল। প্রথমে ২০১২ সালে এবং শেষে ২০১৬ সালে এমন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
ওদিকে শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার পর সাদ হারিরিকে আর লেবাননে দেখা যায় নি। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সৌদি আরবে আটকে রাখা হয়ে থাকতে পারে। শনিবার টুইটারে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে তাকে লেবাননে সৌদি আরবের নতুন রাষ্ট্রদূত ওয়ালিদ ইয়াকুবের সঙ্গে দেখা যায়। এরপর তাকে দেখা না গেলেও হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মাইকেল আওনের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসতে পারেন সাদ হারিরি। প্রেসিডেন্টের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরে প্রেসিডেন্ট যদি তা গ্রহণ করেন তবেই তাহা কার্যকর হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে শাসনকাজ কিভাবে চালিয়ে নেবেন সে বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আওন কোনো ইঙ্গিত দেন নি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ