জাপান দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ১২ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন। রোববার ভোরে পশ্চিম টোকিও’র মার্কিন বিমান ঘাঁটি ইয়োকোতাতে তাকে বহনকারী বিমান অবতরণ করে। সেখানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সফরে এলেন। খবর: বিবিসি ও রয়টার্সের।
সফরে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনে যাবেন। আগামী ১৪ নভেম্বর তার এই ম্যারাথন সফর শেষ হবে। বিগত ২৫ বছরে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের এটাই হচ্ছে দীর্ঘতম এশিয়া সফর। এর আগে ১৯৯১ সালের শেষ ও ১৯৯২ সালের শুরুতে ১২ দিনের দীর্ঘ এশিয়া সফরে আসেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীন পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে। একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে তিনি এই সফরেই রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎ পাবেন বলেও আশা করেছেন।
বিমানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা (যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা) পুতিনের দেখা পাব। উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে আমরা তার সাহায্য চাইব।’ এ সময় ট্রাম্প বলেন, কেউ না, কোনো স্বৈরাচার কিংবা কোনো অঞ্চল আমেরিকার সমাধান প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করতে পারবে না। সফরের প্রথম দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করবেন। এরপর দুই নেতা গলফ খেলবেন। এশিয়া সফরে যাওয়ার আগে শুক্রবার ট্রাম্প ও মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাজ্য হাওয়াইতে যান। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের একটি ব্রিফিংয়ে অংশ নেন ট্রাম্প।
এরপর পার্ল হার্বারে ১৯৪১ সালে জাপানি বোমাবর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের নিহত নৌসেনাদের স্মরণে নির্মিত ইউএসএস অ্যারিজোনা মেমোরিয়াল পরিদর্শনে যান তিনি। শনিবার হাওয়াই থেকেই ট্রাম্প দম্পতি জাপানের উদ্দেশে রওনা হন। ট্রাম্পের ম্যারাথন এ সফরের প্রতিটি পদে পদে উত্তর কোরিয়ার সংকট নিয়েই আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, সফররত ৫ দেশের মধ্যে তিন দেশই সরাসরি উত্তর কোরিয়া সংকটের সঙ্গে জড়িত। সফরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটবদ্ধতা তুলে ধরবেন ট্রাম্প। পিয়ংইয়ংকে মোকাবেলায় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের কাছে অস্ত্র বিক্রির চুক্তিও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন ট্রাম্প। বাকি দু’দেশেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু কর্মসূচি। ভিয়েতনামে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) ও ফিলিপাইনে অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশন্স (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েও উত্তর কোরিয়ার পরমাণু সংকট ইস্যুই ওঠাবেন ট্রাম্প। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার নানা উস্কানিমূলক পদক্ষেপের লাগাম টেনে ধরতে এবং কর্মসূচি থেকে পিছু হটতে পিয়ংইয়ংয়ের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এসব দেশের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চালাবেন ট্রাম্প।
জাপান থেকে ট্রাম্প ৭ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট ভবন ও সিউলের দক্ষিণে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রি পরিদর্শন করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এরপর ৮ নভেম্বর তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ বেশ কয়েকটি দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন। ১০ নভেম্বর ভিয়েতনামের দানাং শহরে অনুষ্ঠিত এপেক সম্মেলনে অংশ নেবেন ট্রাম্প।
১১ নভেম্বর দানাং থেকে ট্রাম্প ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহরে যাবেন। আলোচনায় বসবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রান দাই কুয়াং ও অন্য নেতাদের সঙ্গে। ১২ নভেম্বর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় প্রবেশ করবেন ট্রাম্প। সেখানে আসিয়ানের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক গালা ডিনারে অংশ নেবেন তিনি। এরপর ১৩ নভেম্বর ম্যানিলায় আসিয়ানের সম্মেলনে অংশ নেবেন ট্রাম্প। সেখানে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পের এশিয়া সফর শেষ হবে। তবে ১৪ নভেম্বর ঘোষণা অনুসারে, ফিলিপাইনে অতিরিক্ত একদিন থাকবেন ট্রাম্প।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি