২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১৪

হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই জামিল শেখ ও তার নয় বছরের মেয়ে নুসরাতকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরিকল্পিতভাবেই স্ত্রী আর্জিনা বেগম ও তার প্রেমিক শাহিন দুইজনকে হত্যা করে। স্বামীকে হত্যা করার দৃশ্য দেখে ফেলায় নিজের মেয়ে নুসরাত জাহানকেও হত্যার নির্দেশ দেন আর্জিনা।

আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১ টার সময়ে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ। পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, পরকীয়া সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্ত্রী আর্জিনা বেগম। মধ্যরাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে পরকীয়া প্রেমিক শাহিন মল্লিক।

গত ১ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডার থানার উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে গাড়িচালক জামিল শেখ ও তার নয় বছরের মেয়ে নুসরাত জাহানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওইদিন সন্ধ্যায় নিহত জামিলের বড় ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

১ নভেম্বর রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে আর্জিনা বেগম এবং গতকাল শুক্রবার বিকালে খুলনার বয়রা এলাকা থেকে শাহিন মল্লিক ও তার স্ত্রী মাসুমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর বাসায় সাত হাজার টাকায় দুই রুমের একটি বাসা ভাড়া নেয় জামিল শেখ। সেখানে তার স্ত্রী আর্জিনা বেগম, নয় বছরের মেয়ে নুসরাত জাহান এবং ছেলে আলবিকে নিয়ে থাকতেন। জামিল শেখ পেশায় একজন গাড়িচালক। আর শাহিন মল্লিক পেশায় রাজমিস্ত্রি। শাহিনের স্ত্রী মাসুমা গৃহকর্মী। কর্মব্যস্ততার কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় জামিল শেখ ও শাহিনের স্ত্রী মাসুমা বাসার বাইরে থাকতেন। এই সুযোগেই শাহিন ও আরজিনা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে এই সম্পর্ক অবৈধ সম্পর্কে মোড় নেয়।

গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার বলেন, শাহিন আর্জিনাকে স্বপ্ন দেখাতেন, তারা বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করবেন। কিন্ত পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় জামিল শেখ। আর্জিনা জামিলকে তালাক দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু শাহিন তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার রাতে জামিলের বড় ভাই তাদের বাসায় আসে। ওই রাতে শাহিন তার স্ত্রী,  সবাই মিলে একসঙ্গে রাতের খাবার খায়। পরে জামিলের ভাই চলে গেলে তারা ঘুমিয়ে পড়েন।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহিন বাসার নিচে থেকে আগে একটি কাঠ এনে রাখে। পরে রাতের যে কোনো সময় আর্জিনা ঘরের দরজা খুলে দিলে শাহিন কাঠ দিয়ে জামিলের মাথায় আঘাত করে। এতে জামিলের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে জামিল উঠে শাহিনকে প্রশ্ন করে তুমি আমাকে মারছ কেন। পরে তিন অচেতন হয়ে পড়েন। এরইমধ্যে নয় বছরের মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলবির ঘুম ভেঙে যায়। এরপর আলবি ঘুমিয়ে পড়লেও নুসরাত তার মা ও শাহিনকে প্রশ্ন করতে থাকে তোমরা কেন আমার বাবাকে মারছো। পরে শাহিন জামিলের মাথায় আবারও কাঠ দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তারা ঘরের বাইরে যেয়ে শাহিন নুসরাতকেও হত্যার প্রস্তাব দেয়। পরে জীবন বাঁচাতে আর্জিনাও এতে রাজি হয়। পরে তারা মুখে বালিশ চাপা দিয়ে ও শ্বাসরোধ করে নুসরাতের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে শাহিনের স্ত্রী মাসুমার ঘুম ভেঙে গেলে তিন বিষয়টি জানতে পারেন। পরে শাহিন ও আর্জিনা তাকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে কোনোভাবেই এটা হয়ে গেছে। এখন বাঁচতে হলে দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে হবে। পরে তারা সেখানে থেকে বাইরে গিয়ে খুলনায় চলে যায়।

গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ কমিশনার বলেন, ঘটনাটি মানুষকে বোঝানোর জন্য আর্জিনা কান্নাকাটি করতে থাকে। এর মধ্যে ফজরের আযান হয়। তখন তাদের এক প্রতিবেশী ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় আর্জিনাকে কান্নকাটি করতে দেখে। ওই ভদ্রলোক নামাজ থেকে ফেরার সময় আর্জিনাকে কান্নকাটি করতে দেখে তার স্ত্রীকে বিষয়টি জানায়। পরে ওই ভদ্রলোকের স্ত্রীর মাধ্যমে বিষয়টি বাড়ির মালিক জানতে পারেন।পরে তিনিই পুলিশকে খবর দেন। এ সময় আর্জিনা পুলিশকে জানায় তাদের বাসায় চার থেকে পাঁচজন অজ্ঞাত পরিচয়ের মানুষ এসেছিল তারাই কাঠ দিয়ে জামিলকে ও শ্বাসরোধ করে নুসরাতকে হত্যা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, গুলশান পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার সহকারী কমিশনার মো. আশরাফ হোসেন।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ৪, ২০১৭ ২:৪৭ অপরাহ্ণ