নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘উৎপাদনমুখী সমবায় করি, উন্নত বাংলাদেশ গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে ৪৬তম সমবায় দিবস ২০১৭। দিবসটি উপলক্ষে শনিবার সকাল আটটায় রাজধানীতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। মৎস্যভবন মোড় থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা।
এরপর সকাল ১০টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের বেলুন উড়িয়ে সমবায় দিবসের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এখন সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন এলজিআরডিমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সমবায় অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সফল হয়েছে। উৎপাদনমুখী সমবায় এ লক্ষ্য পূরণে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথে সমবায়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। সমবায়কে নতুন প্রাণ দিতে ও সাধারণ সমবায়ীদের কাছে সহজবোধ্য করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মত বাংলা ভাষায় সমবায় আইন প্রণয়ন করে। সময়ের চাহিদা বিবেচনায় সমবায় খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নতুন সমবায় আইন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭০টি নিবন্ধিত সমবায় প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার ৭২৮ জন সদস্য রয়েছে। সমবায় সমিতিগুলোর কার্যকরী মূলধন প্রায় ১৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকা এবং মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এ সকল সমবায়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৭৩৮ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
এছাড়াও সমবায়ভিত্তিক ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এ পর্যন্ত ৫৭ হাজার ১৪৫ টি সংগঠন সৃষ্টি করে হতদরিদ্র মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সকল সংগঠনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূলধন সৃষ্টি হয়েছে।
সমবায় মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, দুগ্ধ খাতের উন্নয়নে বর্তমানে সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে সুবিধা বঞ্চিত নারী, বেকার যুবক-যুবতির জীবিকা অর্জনের পথ সুগম হয়েছে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানানো হয়।
সমবায় অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়- সমবায়ভিত্তিক মৎস্য খামার, গবাদি পশুর খামার, হাঁস-মুরগির খামার, সামাজিক বনায়ন সমিতির মাধ্যমে পরিবেশের উন্নয়ন, তাঁত ও সেলাই, হস্ত শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মৃৎ শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সমবায়ের মাধ্যমে শিক্ষিত-অর্ধ শিক্ষিত বেকার ও কর্মক্ষম যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ, পোল্ট্রি, কম্পিউটার, গবাদী পশু পালন, ব্লক-বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্ট ইত্যাদি কর্মমুখী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এর মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হচ্ছে তারা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকরা নিজেরাই সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে হলেও বিভিন্ন খামার বা ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন করছে। তারা নিজেদের স্বনির্ভরতার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ