২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৫

কতটা কার্যকর হলো মগবাজার ফ্লাইওভার?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বহুল আলোচিত মগবাজার মৌচাক উড়ালসড়ক যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়ার পর রাজারবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরার দিকে নিত্যদিনের দুঃসহ যানজটের ভোগান্তির অবসান হয়েছে। প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেলের বেশির ভাগ চলছে ওপরের অংশ দিয়ে। তবে বাসের বেশির ভাগই চলে নিচের সড়ক ধরে। দীর্ঘ চার বছরের প্রতীক্ষার পর ধীরগতিতে শেষ হওয়া বাংলামোটর-মৌচাক-শান্তিনগর-রাজারবাগ ও মালিবাগ আবুল হোটেল ফ্লাইওভারটির গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ওই দিন থেকেই পূর্ণাঙ্গভাবে (রামপুরা, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মগবাজার ওয়ারলেস, কারওয়ানবাজার, সাতরাস্তা, রমনা ও বাংলামটর) এই আটটি এলাকার মধ্যে সরাসরি যানবাহনের সংযোগ স্থাপন করে মালিবাগ-মৌচাক উড়ালসড়কটি। এর আগে তিনবারে উদ্বোধন হয়েছিল সাতরাস্তা থেকে ইস্কাটন, এফডিসি মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেল এবং বাংলামোটর থেকে মালিবাগের দিকে এক পাশে যান চলাচল উন্মুক্ত করা হয়।

নামার পথে বেশ কিছু লুপে যানজট

এই উড়ালসড়কটি নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই এটির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ের কথা বলে আসছিলেন পরিবহণ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। কিন্তু তারা যেসব কথা বলে আসছিলেন, সেগুলো সত্য প্রমাণ হয়নি। তবে অফিস সময় শুরুর আগে কিছু লুপ এবং অফিস সময় শেষে কিছু লুপে যানজট বাঁধছে প্রায় প্রতিদিন। অফিস সময় শুরুর আগে হলি ফ্যামিলি, শান্তিনগর লুপ এবং অফিস সময় শেষে বাংলামোটর এবং সোনারগাঁও হোটেলের সামনে নামার পথে যানজট বেঁধে যাচ্ছে।    এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যানজট বাঁধছে বাংলামোটরের অংশে। বাংলামোটর মোড় থেকে ইস্কাটন পর্যন্তই লেগে যাচ্ছে দীর্ঘ যানজট। মোড়ের আগে লুপ নামানোয় এই সমস্যা হয়েছে বলে মনে করেন উড়ালসড়কটির ব্যবহারকারীরা।

এ বিষয়ে উড়াল সড়কটির প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এতোদিন মৌচাক মোড়ে এসে সব দিকে গাড়ি জমা হতো। এখন সেই অংশে গাড়ি জমতে দেখা যায় না। কোন বাধা ছাড়াই এখন মৌচাকের সেই অংশে দিয়ে গাড়িগুলো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একটা অংশে গিয়ে জমা হচ্ছে। আমরাও বিষয়টি লক্ষ্য করেছি, ফ্লাইওভার থেকে নামার অংশ যেমন: বাংলামোটর-শান্তিনগরের দিকে কিছুটা গাড়ির জটলা বেধে যাচ্ছে।’ সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘একদিনেই তো সব যানজটের সমাধান সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। তাই আমরা ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সাথে বিষয়টি নিয়ে বসেছি। তারাও সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে। কিছুটা সময় তো লাগবেই।’

উড়াল সড়কটির দিক নির্দেশনা নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে সহজ করার জন্য মোড়গুলোতে শিগগির বিলবোর্ড বসানো হবে বলে জানান সুশান্ত।

উড়াল সড়কে সিগন্যালে জটলা

আবার নগরীর অন্যান্য উড়াল সড়কের চেয়ে এই উড়ালসড়কটি একটু অন্য রকম। এখানে মালিবাগ ও মৌচাক মোড়ের দুই জায়গাতে ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। এই সিগন্যালেও জটলা দেখা যাচ্ছে দিনের একটি অংশে। রামপুরা থেকে শন্তিনগর এবং রাজারবাগ-শান্তিনগর থেকে রামপুরা ও বাংলামোটরের মধ্যে দুই ট্রাফিক সিগন্যালের কারণে রামপুরা থেকে আসা গাড়িগুলোকে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। রামপুরা থেকে মগবাজার হয়ে বাংলামোটর যেতে হলে সরাসরি উড়াল সড়ক ধরে আসা যায় না। রাজারবাগ গিয়ে সেখান থেকে ঘুরে আসতে হয়। এ কারণে কিছুটা নাখোশ এই পথ ব্যবহারকারীরা।

‘চাইরটা বছর এই রাস্তাডায় কতো কষ্ট সহ্য করলাম, কিন্তু আজকে দেখেন সেই ফ্লাইওভারের সুফল পাইলাম না। রামপুরা থেকে মগবাজার যাইতে হইলে হয় ফ্লাইওভার দিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন নাইমা আবার ঐখান দিয়া ওঠতে হইব, নাইলে মৌচাকের নিচের রাস্তা দিয়া যাইতে হইব। কেন, এই রাস্তা দিয়া কি এই চাইরটা বছর আমরা যাতায়াত করি নাই?’- বলছিলেন রামপুরার এক বাসিন্দা।

আবার মালিবাগ থেকে আসা গাড়িগুলো সাত রাস্তা ধরে চলতে চাইলে সেগুলোকে চলতে হচ্ছে নিচের সড়ক ধরে। অথবা বাংলামোটর দিয়ে ইস্কাটন হয়ে হলি ফ্যামিলির মোড় দিয়ে উঠতে হচ্ছে ফ্লাইওভারে। এসব বিষয় নিয়ে মৌচাক মালিবাগ উড়াল সেতুর প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেখুন, অল্প জায়গায় খুব বেশি কিছু প্রোভাইড (সরবরাহ) করা যায় না। মৌচাকের অংশটিই দেখুন। শান্তিনগর-রাজারবাগ-বাংলামোটরের যে এলাকায়ই যান না কেন, মৌচাক হয়েই যেতে হবে। সে হিসেবে আমদের ট্রাফিক সিস্টেম না দিয়ে আরেকটি তৃতীয় তলা লুপ ও রামপুরা থেকে বাংলামোটরের দিকেও একটি লুপ করা উচিত ছিল। কিন্তু মৌচাকের অংশটি এতোটাই সঙ্কীর্ণ, মানে আশেপাশের বিভিন্ন মার্কেটের কারণে এখানে আরেকটি লুপ করার জায়গা নেই।  এখানে আমরা কী করতে পারি?’।

একই কারণে মগবাজার মোড়েও মগবাজার থেকে সাতরাস্তার দিকে মোড় ঘুরানো যায়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :নভেম্বর ২, ২০১৭ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ