স্বাস্থ্য ডেস্ক:
শীতের সময় শিশুদের অন্যান্য সমস্যার সাথে যএটি বেশি দেখা দেয় সেটি হচ্ছে গলা ব্যথা। অনেকের ক্ষেত্রে গলা ব্যথার প্রধান কারণ হয়ে থাকে সাধারণত টনসিলের কারণে। গলায় ব্যথা হলে কথা বলা, খাবার খাওয়া এমনকি পানিপানেও কষ্ট হয়। একে সাধারণত টনসিলের সমস্যা হিসেবে ধরা হয়। এ রোগে আমাদের দেশে অনেক শিশুই ভুগে থাকে। শীতের সময় টনসিল প্রদাহের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। টনসিল ও এডিনয়েড এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি, যা আমাদের গলার ভেতরে শ্বাস ও খাদ্যনালীর মুখে অবস্থিত। শ্বাস ও পরিপাকতন্ত্রের প্রবেশপথে প্রহরী হিসেবে টনসিল ও এডিনয়েড কাজ করে।
এরা খাদ্য ও বায়ুবাহিত ক্ষতিকারক পদার্থ ও রোগজীবাণু ধ্বংস করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। টনসিল ও এডিনয়েড শিশুদের চার থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে খুব সক্রিয় থাকে।
এই সময়েই শিশুরা টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এডিনয়েড সাধারণত বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছোট হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে বিলীন হয়ে যায়।
শিশুরা সাধারণত টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিল রোগে ভুগে থাকে। তাই টনসিল ও এডিনয়েডের অসুখ অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
রোগের কারণ:
শিশুর দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি
এলার্জি জনিত অসুখ কারণে টনসিল প্রদাহ বাড়তে পারে।
দাঁত, নাক ও সাইনাসের প্রদাহ
ঠাণ্ডার প্রতি খুব বেশি সংবেদনশীলতা রোগ সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
ভাইরাস ও বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণেও এই রোগ জটিল রূপ ধারণ করে।
সাধারণত স্কুল থেকে এ রোগ শিশুদের মধ্যে সংক্রমিত হয়।
তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস
সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অবহেলা ইত্যাদি এ রোগের কারণ।
রোগের লক্ষণ:
গলায় তীব্র ব্যথা এবং ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।
শিশু সাধারণত কিছু খেতে চায় না।
ঢোক গেলার সময় কানের ভেতর ব্যথা লাগতে পারে।
মাঝে মাঝে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জ্বরের সঙ্গে অনেক সময় কাঁপুনি, খিচুনি, মাথাব্যথা ও সারা শরীরে ব্যথাও থাকে।
তাছাড়া গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায় ও ব্যথা থাকে।
সর্দি থাকা, নাক বন্ধ থাকা, নাকের নিঃসরণ, মুখে দুর্গন্ধ,
খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি এবং গলার উপরিভাগের লসিকাগ্রন্থি সব সময় ফুলে থাকে।
তাছাড়া টনসিল ও এডিনয়েডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
এ রোগের সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো,
এসব শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিবন্ধকতা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে তাদের শ্বাস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে। যেমন- পালমোনারি হাইপারটেনশন, হৃদরোগ এবং হঠাৎ হৃদযন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘুমের মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
চিকিৎসা:
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ঠাণ্ডা খাওয়া পরিহার করতে হবে।
দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যা,
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস,
হালকা শরীরচর্চা করতে হবে।
এরপরও উপশম না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও প্রতিবন্ধকতা জনিত সমস্যায়-টনসিল ও এডিনয়েড অপারেশনের মাধ্যমে ফেলে দেওয়া ভালো।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ