নিজস্ব প্রতিবেদক:
পেঁয়াজের তীব্র ঝাঁজে ক্রেতা সাধারণের চোখে জল পড়তে শুরু করেছে। ঘাটতি না থাকলেও দেশের বাজারে এভাবে হু হু করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের লোকেরা। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এমনভাবে দাম বাড়ছে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সেল। পেঁয়াজের দামের লাগাম টেনে ধরতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামিমা ইয়াছমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জনা গেছে, আলোচনায় উঠে আসে দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানি ব্যয় বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সূত্র জনায়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশেই উৎপাদন হয় ১০ লাখ টনের ওপরে। আর আমদানি করা লাগে ১০ লাখ টনের মতো।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত সাত লাখ ৯০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। এর বিপরীতে সেটেলমেন্ট হয়েছে আট লাখ ছয় হাজার টন। অর্থাৎ চলতি বছরে এরই মধ্যে আমদানি করা আট লাখ ছয় হাজার টন পেঁয়াজ দেশে পৌঁছেও গেছে। তারপরও কেন এভাবে দাম বাড়বে?
সূত্রটি আরও জানায়, বর্তমানে পাঁচ লাখ টনের মতো দেশি পেঁয়াজ মজুদ আছে। সুতরাং সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে- এমন যুক্তি সঠিক নয়। বৈঠকে উপস্থিত এক সদস্য জানান, আমরা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছি দেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ আছে। সুতরাং পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।
জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিন বলেন, পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়েছে। এখন দাম যাতে কমে সেই পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে। দাম বাড়ার কারণে মজুদ করা পেঁয়াজে আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় মজুদ করা হচ্ছে। এটা একটি সমস্যা। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বিকল্প সোর্স থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হবে। আশা করছি, সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম আর বাড়বে না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, যা সোমবার বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আর এক বছর আগে যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এক বছরে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬২ শতাংশ এবং মাসের হিসাবে বেড়েছে ৭৯ শতাংশ।
গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। মূলত বড় ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বৃষ্টিতেও কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এজন্য পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কম। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে ৪২ হাজার ৩৮২ টন, ফেব্রুয়ারি মাসে ৫২ হাজার ১১৭ টন, মার্চ মাসে ৬৫ হাজার ২৫৫ টন, এপ্রিল মাসে ৬২ হাজার ২২০ টন, মে মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১১ টন, জুন মাসে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৮৯ টন, জুলাই মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯ টন, আগস্ট মাসে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৫০ টন, সেপ্টেম্বর মাসে ৬৫ হাজার ৪৬২ টন ও ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৩৫৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৪৫ টন। এ পর্যন্ত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির লক্ষ্যে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ১৯ হাজার ৪৩ টনের।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ