নিজস্ব প্রতিবেদক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন একই পরিবারের পাঁচ প্রতিবন্ধী মানুষ। বাড়ির কর্তা রঞ্জিত সরকারের স্ত্রীছাড়া অন্য পাঁচ সদস্যের সবাই প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন এসব মানুষ ভাতা পেলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। অভাব অনটনের সাথে অবিরাম যুদ্ধে ক্লান্ত তারা। এরপরও থেমে নেই তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জন্ম থেকে বাকপ্রতিবন্ধী রঞ্জিত চন্দ্র ২০ বছর আগে বিয়ে করেন নাসিরনগরের অরুণা সরকারকে। রঞ্জিত-অরুণা দম্পত্তির চার সন্তান। বিপুল সরকার, ববিতা সরকার, শিমুল সরকার ও কবিতা সরকার নামে চার সন্তানই বাবার মতোই জন্ম থেকে বাকপ্রতিবন্ধী।
রঞ্জিত সরকার কৃষি ও গৃহস্থালির কাজ করেন। দুই ছেলে বিপুল ও শিমুল কাঠমিস্ত্রীর কাজ শিখছে। বড় মেয়ে ববিতা সেলাইয়ের কাজ করে। সবার ছোট মেয়ে কবিতা সাংসারিক বিভিন্ন কাজে সময় দেয়। রঞ্জিত সরকারের বাবা-মা ইতোমধ্যেই প্রয়াত হয়েছেন। ছোট ভাই সরকারি চাকুরে পন্ডিত চন্দ্র সরকার ও তাঁর স্ত্রী থাকেন একই বাড়িতে। তাঁরা অবশ্য কথা বলতে পারেন।
অরুণা সরকার ও পন্ডিত সরকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রঞ্জিত সরকারের পরিবারের পাঁচ সদস্য বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাঁরা বেশ বিপাকে আছেন। কানে শুনেন না বলে তাঁদেরকে সহজেই কিছু বুঝানো যায় না। কোনো কাজ দিলে সঙ্গে একজনকে থাকতে হয়।
রঞ্জিতের স্ত্রী অরুণা সরকার জানান, সব কিছু জেনেশুনেই রঞ্জিত সরকারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রঞ্জিত সরকার কথা বলতে ও বুঝতে না পারায় বিয়ের পর তিনি বেশ সমস্যায় পড়েন। তবে শ্বশুর-শাশুড়ি তা কাটিয়ে তুলতেন। সংসার বড় হওয়ার পর এখন ভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। কেননা রঞ্জিত সরকারের তেমন কোনো আয় না থাকায় আর্থিক টানাপোড়েন লেগেই আছে সংসারে। দুই ছেলে মাত্র কাঠের কাজ শিখছেন। তাও নিয়মিত যেতে চায় না। বড় মেয়ে ববিতা সেলাইয়ের কাজ করে যে আয় করেন তা খুবই নগন্য। তবে দেবর পন্ডিত সরকার তাঁদেরকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন।
অরুণা সরকার আরও বলেন, ‘বিয়ের বয়স হওয়া বড় মেয়ের ভাগ্যে কি আছে জানি না। কোনো পাত্রের সন্ধান পাচ্ছি না। বিয়ে দিতে পারবো কি-না জানিনা। সব মিলিয়ে খুব সমস্যায় আছি। হতদরিদ্র এই মানুষগুলো সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানান পন্ডিত সরকার।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ