উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে জেএসসি, জেডিসি ও সমমানের পরীক্ষা। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া-টেনাফের ১৪টি মাধ্যমিক ও ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এতে চরম বিপত্তি ঘটছে যানবাহন নিয়ে। এ ছাড়া গত ২৫ আগষ্ট থেকে কিছুদিন বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন কক্ষ ব্যবহার হয়েছে খাদ্য গুদাম ও প্রশাসনের লোকজনের থাকার আবাসন হিসাবে। উখিয়া টেকনাফের ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ১ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়ায় জেএসসি ও জেডিসি পরিক্ষা শেষেই শুরু বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা। প্রাপ্ত তথ্যমতে এই ২৭টি বিদ্যালয়ে অন্তত ১৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এতে মাধ্যমিকে আছে ৮ হাজার ও প্রাথমিকে ৫ হাজার শিক্ষার্থী। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হওয়ায় ছেলে-মেয়েদের কাঙ্খিত ফলাফল নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন বলে জানালেন অভিভাবকরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়া উপজেলার পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়, থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়, বালুখালী উচ্চ বিদ্যালয়, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া ডিগ্রি কলেজ, বঙ্গমাতা মহিলা কলেজ, কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাপালং ফাজিল মাদ্রাসা,আবুল কাসেম নুরজাহান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, সাইদ আলম দাখিল দাখিল মাদ্রাসা বালুখালী কাসেমীরা উচ্চ বিদ্যালয়, টেংখালী উচ্চ বিদ্যালয়, ফারীর বিল আলীম মাদ্রাসা, টেকনাফের আলহাজ্ব আলী আছিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ পরীর দ্বীপ হাজী বশির আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়। কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ২৫ আগষ্ট থেকে অন্তত ১০/১২ দিন বিদ্যালয়ে কোন কার্যক্রম হয়নি। হওয়ার সুযোগও ছিলনা। সর্বত্র বিশৃংখল পরিস্থিতিতে পাঠদানের কোন পরিবেশই ছিলনা। এমন জাতীয় সমস্যায় কিছু বলার সুযোগ ছিল না কারো। উখিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক নাজেম উদ্দিন জানিয়েছেন, গাড়ির কারণে মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাইনি ১ মাস। পাঠানোর কোন উপায় ছিল না। অধিকাংশ সময় রাস্তা বন্ধ থাকে। জেএসসি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে আমার মেয়ে। তাই কাঙ্খিত ফলাফল নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এ রকম অসংখ্য শিক্ষার্থী ঠিকমত বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। কুতুপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক রমজান আলী জানিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের বার্ষিক পরিক্ষা অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যহত হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগ ব্যবস্থা। দুই কিলোমিটার রাস্তা যেতে একটি গাড়ির এক ঘন্টারও বেশী সময় লাগে। রাস্তায়-রাস্তায় রোহিঙ্গার ঢল। রাস্তা দিয়ে চলাচল ঝুকিপুর্ণ হয়ে উঠায় ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাইনি অভিভাবকরা। বিদ্যালয় খোলা থাকলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল একেবারে হতাশাজনক। কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ছালেহ আহমদ চৌধুরী রোহিঙ্গার কারণে উখিয়া ও টেনাফের অন্তত ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যহত হয়েছে তা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকার শিক্ষার সার্বিক প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাউশি থেকে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর জেলা অফিস একটি প্রতিবেদন পাঠায় মাউশিতে। এতে উল্লেখ করা হয়, টেকনাফ ও উখিয়ায় ১৪টি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। কক্সবাজারের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম সরজমিনে দেখতে গত ৮ অক্টোবর মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর এস এম ওয়াহিদুজ্জামান টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরির্দশন করেন। প্রফেসর এস এম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, কক্সবাজারে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের কারণে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ত্রাণ সংরক্ষণ ও মাঠে ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় স্বাভাবিক শিক্ষা কাযক্রম ব্যাহত।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ