২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১৪

১৬শ’ একর সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে রোহিঙ্গাদের বস্তি নির্মাণ

কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে তুলতে এক হাজার ৬০০ একর জমির সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করা হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার। সম্প্রতি কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ ক্ষয়ক্ষতির এ পরিমাণ বের করেছে। স্থানীয় জনগণের সহায়তায় এ এলাকায় বনায়ন করেছিল স্থানীয় বনবিভাগ। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্ভব না হলে এবং ফের বনায়ন করা না গেলে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে পাহাড় ধসের ঝুঁকিও রয়েছে। মিয়ানমারে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। নতুন পুরনো সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১০ লাখের বেশি। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে দুই হাজার একর জমি নির্ধারণ করে সরকার। পরে আরও এক হাজার একর বাড়িয়ে তিন হাজার করা হয়। এ কারণে সংকটের মুখে পড়েছে বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফে গড়ে তোলা প্রায় ১৬‘শ একর সামাজিক বনায়ন এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে দেড়শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিণাম স্থানীয় জনগণ ও বনবিভাগকে বহন করতে হবে। কারণ পাঁচ বছর মেয়াদে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে চুক্তি করে এসব বনায়ন গড়ে তুলেছিল বনবিভাগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফে নতুন নতুন বনাঞ্চল দখল করে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। সরকার নির্ধারিত জমিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় নতুন আসা রোহিঙ্গারা সামাজিক বনায়নের এসব জমিতে বসতি গড়ে তুলছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বনবিভাগের আরও অনেক জমি রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাবে।’ এনভায়রনমেন্ট কনজারভেশান ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টস এর পরিচালক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, ‘পাহাড় ও বন উজাড় হওয়ায় পরিবেশের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এই ক্ষতি বোঝা না গেলেও কিছুদিন পরে ঠিকই বোঝা যাবে। অচিরেই উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ি ছড়া ও খালের পানির ওপর নির্ভরশীল ২০ শতাংশ বোরো চাষ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধু স্থানীয় জনগণ কিংবা পরিবেশ নয়, এখন যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে উঠছে তাতে মারাত্মক পাহাড় ধসের ঝুঁকি রয়েছে। আগামী বর্ষার আগে পাহাড় থেকে রোহিঙ্গাদের সরাতে না পারলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা বসতির অনেকগুলো এরইমধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে ওইসব স্থানে নতুন করে বনায়ন না হওয়ায় তা বেদখল হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক হওয়া এবং পরিবেশ রক্ষা উভয়দিকেই ভাবতে হবে।’

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ২৮, ২০১৭ ৭:৫৫ অপরাহ্ণ