আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ব্রাজিল, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, এল সালভেদর, গুয়াতেমালা থেকে মেক্সিকো হয়ে বে-আইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আদম পাচারকারী চক্রের হোতা শরাফত আলী খানকে ( ৩২) ৩১ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডভোগের পর তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্দেশও প্রদান করেছেন ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল কোর্টের জজ রেগি বি ওয়াল্টন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় আদম পাচারের চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায়ের তথ্য প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কেনেথ এ ব্ল্যাঙ্কো বলেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত শরাফত একটি নেটওয়ার্ক গড়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অর্থ নিয়ে দুর্গম পথে যুক্তরাষ্ট্রে আনার এ নেটওয়ার্কে থাকা আরও লোকজনকে ধরার চেষ্টা চলছে। শরাফতকে কাতার থেকে গ্রেফতার করা হয় গত বছরের জুলাই মাসে। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এনে তার বিচার করা শুরু করা হয়। এই বিচারের মধ্যদিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থানের কথাই প্রকাশ পেল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পানামায় সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি জঙ্গল রয়েছে, তার নাম ডেরিয়েন গ্যাপ। সামান্য পানি আর খাদ্য নিয়ে পায়ে হেঁটে এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে অনেকেই শাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ কিংবা বাঘের পেটেও গেছে। আবার পানামা খাল সাঁতরে পাড়ি দিতে গিয়েও অনেকে ভেসে গেছে। এমন অমানবিক কর্মকাণ্ডকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না। মামলা চলাকালে শরাফত খান আরও কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা বিবেক সম্পন্ন মানুষ মাত্রই চমকে উঠবেন। কোনো মতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পর অনাদায়ী অর্থ আদায়ের জন্য জিম্মি করে রাখার কৌশলও অবলম্বন করা হয়।
ফেডারেল কোর্টের নথি অনুযায়ী, শরাফত খান নিজেকে আড়ালে রাখতে অনেক সময়েই ডা. নকিব হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তার মক্কেলদের কাছে। এজেন্টরাও তাকে ডা. নকিব হিসেবেই জানতো। এই ব্যক্তি একেকজন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অঙ্গীকারে ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে নিয়েছে বলে মামলায় প্রমাণিত হয়। তবে সব টাকা তার হাতে আসতো না। এজেন্টরা ঘাটে ঘাটে খরচা বাবদ কেটে রাখতো। কাতার, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, মেক্সিকোতে রয়েছে এই নেটওয়ার্কের এজেন্ট। এসব দেশের সীমান্তরক্ষীসহ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথেও এদের লেন-দেনের ব্যাপার রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরও অনেকেরই দিন কাটে ডিটেনশন সেন্টারে। এক পর্যায়ে অনেককেই নিজ দেশে ফিরে যাবার ঘটনাও ঘটছে।
এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, দালাল ধরে মোটা অর্থ প্রদানের পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন যুক্তরাষ্ট্রে আসার চেষ্টা না করে। কারণ, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র্রে প্রবেশ করলেই বৈধতার কোন গ্যারান্টি নেই। বরং, দালালের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থে নিজ দেশেই ব্যবসা করলে আমেরিকার চেয়েও ভালো অবস্থায় দিনাতিপাত করা সম্ভব বলে ভুক্তভোগীরা মন্তব্য করছেন।
প্রসঙ্গত: নেটওয়ার্কটি মোটা অর্থ দিয়ে বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি গত ৬/৭ বছরে মেক্সিকো আসতে সক্ষম হন। এদের অধিকাংশই সীমান্ত রক্ষীদের দৃষ্টির সীমানায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন এবং ধরা পড়ার পরই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তবে পরবর্তীতে তারা বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে সক্ষম না হওয়ায় মাসের পর মাস টেক্সাস, আলাবামা, ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ডিটেনশন সেন্টারে অতিবাহিত করতে হয়।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি