২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২৫

মাল্টা চাষে চাষীর সাফল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাড়ি বাড়ি গান শেখাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ির আঙিনায় গাছভর্তি থোকা থোকা মাল্টা দেখে চাষ করার শখ জাগে গানের মাস্টার অচিন্ত কুমার মিস্ত্রির। চাষও শুরু করেন স্বরূপকাঠী উপজলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাববাড়ি গ্রামের নিজ বাড়িতে। উপজেলার রাজবাড়ি কলেজের প্রফেসর প্রতিবেশী শ্যামল বাবুর পরামর্শ আর নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে চার বছর আগে বাবার আট কাঠা জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন অচিন্ত মিস্ত্রি। শুরুতে ২২৫টি মাল্টা চারা রোপণ করে বছরের প্রথমেই গাঢ় সবুজ রঙের মধ্যে হলদেটে ভাবের টসটসে মিষ্টি স্বাদের পাকা মাল্টায় ক্ষেত ভরে যায় তার। উপজেলার কৃষি বিভাগের কোনোরকম পরামর্শ ছাড়াই ওই বছর তার বাগানে মাল্টার বাম্পার ফলন মিলে।

এ বছর ৩৬৫টি গাছে অচিন্তের ক্ষেতে প্রায় ৮৫-৯০ মণ  মাল্টার ফলনে তিনি এখন এ উপজেলার মাল্টা চাষের রোল মডেল। তার ক্ষেত ভর্তি মাল্টা দেখে যে কারোরই নজর কাড়ে। চাষের শুরুতেই ক্ষেতে কাঙ্খিত পরিমাণে মাল্টা মেলায় বর্তমানে অচিন্তের বেড়েছে মাল্টা বাগানের পরিধি ও ফলের পরিমাণ। অচিন্তের সেই আট কাঠা জমি থেকে এখন এক বিঘা জমিতে সম্প্রসারণ হয়েছে মাল্টার চাষ। রয়েছে ৬০০টি মাল্টা গাছ। এছাড়াও ক্ষেতে রয়েছে চাইনিজ কমলা, বাতাবি ও আরো বাহারি জাতের মাল্টা চারা ও ফল ভর্তি গাছ। প্রতিদিনই উৎসুক জনতা আসে তার ‘শান্তি ছায়া নার্সারি ও ফলজ বাগান’ দেখার জন্য।

মাল্টাচাষী অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি বলেন, একসময় গানই ছিল তার নেশা ও পেশা। তিনি বরিশাল বেতারে গান করেন পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের গান শেখাতেন। এই গান শেখানোর জন্যই বিভিন্ন জায়গায় পদচারণায় নানা জায়গায় দেখা হয় ফল ভর্তি মাল্টা গাছ। এতে আগ্রহ জাগে মাল্টা চাষের। প্রথম বছর তিনি প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তার উৎপাদিত মাল্টা বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি প্রায় বিশ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছরই বাড়ে বাগানের পরিধি ও ফল। আর এসব উৎপাদিত মাল্টা তিনি পার্শ্ববর্তী কাউখালি, নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠির বিভিন্ন হাটে বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন, এ বছর তার ৩৬৫টি গাছে ৯০ মণের মতো মাল্টার ফলন মিলেছে। পাঁচ হাজার টাকা মণ হিসেবে সে মাল্টা বিক্রি করে তার উপার্জন হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।

মাল্টা চাষী অচিন্তের দুই ছেলে-মেয়ে। বড় মেয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হার্ট ফাউন্ডেশনের নার্স এবং ছেলে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী পিকি মিস্ত্রি সর্বদা থাকেন বাগান দেখাশুনার কাজে। অচিন্ত বলেন, তার দেখাদেখি এলাকায় বর্তমানে অনেকে মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গাছের সঠিক পরিচর্যা ও পাশে জন্মানো আগাছা নিড়ানোর জন্য সর্বদা তার রয়েছে একজন শ্রমিক। এছাড়া ফলের মৌসুমে তিন থেকে চারজন শ্রমিক ক্ষেতে কাজ করে থাকে। মাল্টা চাষের জন্য বড় ধরনের খরচপাতি ও পরিচর্যার দরকার হয় না।

সফল এই মাল্টাচাষী বলেন, বারি-১ জাতের এই মাল্টা গাছে বাংলা মাঘ মাসে ফুল আসে। তারপর ফুল টেকানোর জন্য হরমোন জাতীয় স্প্রে দিতে হয়। এরপরে ফালগুনে ফুল থেকে গুটি আসে। এরপরে গাছে বেড়ে উঠে গাঢ় সবুজ রঙের থোকা থোকা মাল্টা। বাংলা আশ্বিন থেকে অগ্রাহায়ণ মাস পর্যন্ত বাজারে পুরোপুরি মাল্টা বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়ে যায়। তার বাগানের মাল্টা একদম বিষমুক্ত বলে বাজারে বিক্রির আগেই স্থানীয়রা নেওয়ার জন্য এসে কিনে নিয়ে যায়।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :অক্টোবর ২৮, ২০১৭ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ