নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবার জন্য ১০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল করেছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন উখিয়া টিভি রিলে উপকেন্দ্রের পাশে রাবার বাগানের ভেতরে ছোট ছোট তাঁবু টানিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংবলিত এই হাসপাতাল। অনানুষ্ঠানিকভাবে গত ১৬ অক্টোবর ৬০ শয্যা নিয়ে হাসপাতালটি যাত্রা করে। হাসপাতালের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্বরত মো. বেলাল হোসাইন সরদার জানান, অচিরেই সেখানে ৪০ শয্যার আরো একটি কলেরা ইউনিট খোলা হবে।
বেলাল হোসেন আরো জানান, পুরুষ, মহিলা ও শিশু- এই তিন ওয়ার্ডে বিভক্ত হাসপাতালটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালনায় ও ফিনল্যান্ডের (ফিনিশ এনজিও) এবং নরওয়ের অর্থায়নে এই হাসপাতালে এইচআইভি, কলেরা, টিবিসহ জটিল ও কঠিন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কেন্দ্র এবং সব ধরনের রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে স্থাপন করা হয়েছে সর্বোচ্চ প্রযুক্তির অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।
সরেজমিনে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনকেও চিকিৎসাসেবা দিতে স্থাপন করা হয়েছে অপারেশন থিয়েটার, রেডিওলজি ল্যাব, এক্সরে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।
চিকিৎসাসেবা দিতে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) নিযুক্ত ১৫ বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ১৫ বিদেশি অভিজ্ঞ নার্স এবং ১২ বাংলাদেশিসহ ৪২ জন চিকিৎসক-নার্স নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।
গত ১৬ অক্টোবর চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগীর চিকিৎসা ও পথ্য দেওয়া হচ্ছে। আগামী চার মাস চিকিৎসা কার্যক্রম রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে চিকিৎসকদের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মোহাম্মদ মহসিন জানান। কোনো কোনো দিন অস্ত্রেপচারও হচ্ছে এই ফিল্ড হাসপাতালে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক রোহিঙ্গা মহিলার সফল অস্ত্রোপচারের কথাও জানান তিনি।
কক্সবাজারের বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী জানান, ১৬ অক্টোবর অনানুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (আইএফআরসি) সেক্রেটারি আস সাঈ হাসপাতাল পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবে মিল্লাত তার সঙ্গে ছিলেন।
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী আরো জানান, শুধু রোহিঙ্গা নয় স্থানীয় লোকজনকেও এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ-পথ্য দেয়া হবে।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-নিপীড়ন শুরু হলে গত দুই মাসে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখনো দলে দলে আসছে তারা। গতকাল বুধবার প্রায় আড়াই শ পরিবার বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অনেকে নানা রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে এইডস রোগীও রয়েছে। ছয় হাজারের বেশি নারী গর্ভবতী। এ ছাড়া এখানে আসার পর অনেকে ডায়রিয়া, কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ