২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:০৬

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত লড়াই করে হারাল

স্পোর্টস ডেস্ক:

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা প্রমাণ করেছে টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার ধুন্ধমার ব্যাটিং নয়, ধারাবাহিক ব্যাটিং বড় স্কোর গড়তে বড় ভূমিকা রাখে। বলার অপেক্ষা রাখে না দুই দলের জয়-পরাজয়ের ২০ রানের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ডট বল ও বাউন্ডারি থেকে রান পাওয়ার প্রবণতা।

দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি হারলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছে বাংলাদেশ। অন্তত টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের মতো হারার আগেই হারেনি বাংলাদেশ! ব্লুমফন্টেইনের ম্যানগাউং ওভালে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেম ৪ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ১৯৫ রান। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে বাংলাদেশের রান ১৭৫।

টস হেরে বোলিংয়ে নেমে শুরুতে আমলার উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপেই রেখেছিল বাংলাদেশ। মিরাজ দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে দেন সাফল্য। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র শেষ দুই ওভারে পাল্টে যায় চিত্র। প্রথম চার ওভারে ৩৩ রান তোলা দক্ষিণ আফ্রিকা পরের দুই ওভারে স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৩২ রান!

রুবেল ও শফিউলের উপর ঝড়টা তুলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া এবি ডি ভিলিয়ার্স। দুই ওভারে আসা ৭ বাউন্ডারির ৬টিই মারেন ডি ভিলিয়ার্স। অপর বাউন্ডারি আসে ডি ককের ব্যাট থেকে। ডি ভিলিয়ার্স হাত খোলার পর দ্রুত রান পায় স্বাগতিক দল। তবে দশম ওভারের শেষ বলে বিস্ফোরক এ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সফরকারী শিবিরে স্বস্তি নিয়ে আসেন মিরাজ। ২৭ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৪৯ রান করে আউট হন ডি ভিলিয়ার্স।

তার ফিরে যাওয়ার পর রানের চাকায় কিছুটা লাগাম পড়ে। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে সাকিব প্রতিপক্ষের অধিনায়ক জেপি ডুমিনিকে ফিরিয়ে দ্রুত বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন। তবে সাকিবের থেকে কৃতিত্ব বেশি দিতে হবে ইমরুলকে। লং অনে রকেট গতির বল দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন ইমরুল।

এরপর ১৫তম ওভারে রুবেল দূর্দান্ত বোলিং উপহার দেন। ৩ রানের খরচে নেন সর্বোচ্চ রান করা ডি ককের উইকেট। ৪৪ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। পঞ্চম উইকেটে ৬২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বিশাল সংগ্রহ এনে দেন ফারহান বেহারদিয়েন (৩৬) ও ডেভিড মিলার (২৫)।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডেন পিটারসেনের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান ইমরুল কায়েস। কাগিসো রাবাদা না থাকার সুবিধাটা শুরুর দিকে কাজে লাগায় সফরের দুই ‘ব্যর্থ’ ব্যাটসম্যান ইমরুল ও সৌম্য। ওভার প্রতি দশ করে প্রথম তিন ওভারে রান তুলেন তারা। চতুর্থ ওভারেও একই রানের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু ওই ওভারের পঞ্চম বলেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। হেন্ড্রিকসের বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ১০ রান করা ইমরুল।

সঙ্গী হারালেও সৌম্য থেমে থাকেননি। উইকেটের চারিপাশে দারুণ শটে রানের চাকা সচল রাখেন। তার নেওয়া শট গুলোতে ছিল আত্মবিশ্বাস, ছিল নিখুঁত টাইমিং ও প্লেসমেন্ট। কিন্তু বড় ইনিংস খেলার সুযোগটি নিজ হাতে নষ্ট করেন ৪৭ রানে। ফিকোযাওয়ের সোজা বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। এর আগে সাকিব তিনে নেমে ১৩ রানে আউট হন অভিষিক্ত ফ্রাইলিঙ্কের বলে।

সৌম্য আউট হওয়ার কোনো ব্যাটসম্যানই মাথা তুলে লড়াই করতে পারেননি। মুশফিক (১৩), মাহমুদউল্লাহ (৩), সাব্বির (১৯) ও মিরাজ (১৪) দ্রুত সাজঘরে ফিরেন। দ্রুত উইকেট হারানোর পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে না পারায় জয়ের লক্ষ্য বড় হতে থাকে। ফলে ভালো শুরুর পরও মাঝপথে পথ হারায় সাকিব আল হাসানের দল। শেষ দিকে তরুণ মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিজের ব্যাটিং দ্যুতি ছড়ান। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন এ অলরাউন্ডার।

দুই দলের আগের চার মুখোমুখিতে চারটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ব্লুমফন্টেইনে পরাজয়ের তালিকায় বাড়ল আরেকটি সংখ্যা। আশা জেগেছিল, বিশ্বাস জন্মেছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের হাত ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শেষ প্রান্তে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই অপেক্ষা আরও বাড়াল টাইগাররা।

সফরের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ২৯ অক্টোবর। পাকিস্তানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শততম টি-টোয়েন্টি খেলার দ্বারপ্রান্তে প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচে কি বাংলাদেশের ভাগ্য পাল্টাবে? পচেফস্ট্রুমে জানা যাবে এ প্রশ্নের উত্তর।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ২৭, ২০১৭ ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ