২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৫৭

শ্যুটিংয়ের উজ্জ্বল আলো

ক্রীড়া প্রতিবেদক :

আবার পদকের নেশায় ছুটছে শ্যুটিং। ক্লাভস ক্রিস্টেনসেনের অধীনে ডিসেম্বরে ইরানে এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ থেকেই শুরু হয়েছিল রাইফেল শ্যুটারদের পদক বিপ্লব। এই ধারায় এবার আজারবাইজানেও আলোকিত বাংলাদেশের শ্যুটিং।

ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে যাওয়ার আগেই একধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল শ্যুটারদের নিয়ে। প্রত্যাশার মূলে ছিল তাঁদের ট্রেনিংয়ে উন্নতি, যদিও সে কথা মুখ ফুটে কেউ বলে যাননি। কারণ ইরান, তুরস্ক ও আজারবাইজানের শ্যুটাররা আছেন গেমসে। এর পরও পদক জিতে দেখিয়ে দেওয়ার একটা সুপ্ত বাসনা ছিল শ্যুটারদের মধ্যে। তাই বলে স্বর্ণপদকের মতো বড় স্বপ্ন হয়তো ছিল না। বাকুতে এই অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়েছেন আবদুল্লাহ হেল বাকী ও আতকিয়া হাসান দিশা। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে দুজনের স্বর্ণারোহণ দেখে যেন কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেনও খানিকটা বিস্মিত, ‘আমি খুব খুশি যে ইরানের মতো শক্তিশালী দলের সঙ্গে লড়াই করে সোনা জিতেছে তারা। অবশেষে বাকি তার সেরাটা দিয়েছে, এটা বিশেষ ব্যাপার। এই জয় তাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। ’ রিও অলিম্পিকের আগে থেকে কমনওয়েলথ গেমসে রুপাজয়ী এই শ্যুটারকে নিয়ে শ্যুটিং ফেডারেশন অনেক কিছু করেছিল। বিশ্বকাপ ও শ্যুটিং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পাঠিয়েছিল তাঁকে কোটা প্লেস অর্জনের জন্য। সেটা পারেননি। সেই ব্যর্থতার মিছিল থেকে অনেক দিন পর বাকী নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন রাইফেল হাতে, ‘অনেক দিন পর আমার মনের মতো পারফরম্যান্স হয়েছে। আমার লক্ষ্য অলিম্পিকে কোটা প্লেস নেওয়া। এর আগে বেশ কয়েকটি ইভেন্টে কাছাকাছি গিয়েও পারিনি। দলগত ইভেন্টে পার্টনারের পারফরম্যান্স একটা বড় ব্যাপার। আমার সঙ্গে দিশা খুব ভালো মেরেছে, সেটার প্রভাব আমার পারফরম্যান্সের ওপরও পড়েছে। আমাদের দলে যারা আছে সবাই খুব ভালো শ্যুটার। ’

তাঁর সঙ্গী আতকিয়া হাসানের ব্যাপারে দারুণ উচ্চকণ্ঠ এই ডেনিশ কোচ, ‘বিশেষ করে দিশা আমাকে চমকে দিয়েছে। এরকম বড় ইভেন্টে এসে মাথা ঠাণ্ডা রেখে শেষ পর্যন্ত সঠিক নিশানায় গুলি ছোড়া একটা বড় ব্যাপার বটে। ’ গত ডিসেম্বরে ইরানে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের যুব বিভাগের দলগতে আতকিয়া হাসান রুপা জিতেছিলেন জুঁই ও শারমিনকে সঙ্গে নিয়ে। ওই চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের জুনিয়র বিভাগে রাব্বী হাসান মুন্নাও রুপা জিতেছিলেন। বাকুতেও ধরে রেখেছেন তিনি সেই একই পারফরম্যান্স। সলিডারিটি গেমসে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের যা সাফল্য সবই শ্যুটিংয়ের সৌজন্যে। রাইফেল কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেনের বিশ্লেষেণে এই ছেলেদের সামনে দারুণ ভবিষ্যৎ হাতছানি দিচ্ছে, ‘আমাদের পুরো শ্যুটিং দলটাই বেশ প্রতিভাবান। তাদের মধ্যে ভালো করার আগ্রহটা আমি টের পেয়েছি ট্রেনিংয়ে। টোকিও অলিম্পিককে সামনে রেখে আমাদের যে লম্বা প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে তারই ফল পেতে শুরু করেছি। জেতার অভ্যাসটা তৈরি হয়ে গেলে বড় বড় শ্যুটিং ইভেন্টে আরো ভালো করবে তারা। ’

এই বছরের শুরুতে শ্যুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন একটা দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়েছে তরুণ শ্যুটারদের তুলে আনার। নিয়োগ দিয়েছে ডেনমার্কের রাইফেল কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেন ও মন্টেনেগ্রোর পিস্তল কোচ মার্কো সকিচকে। ইরানে এশিয়ান এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে ওই সাফল্য দেখার পর গত জানুয়ারিতে দুই কোচকে নিয়োগ দিয়েছিল ফেডারেশন। উদ্দেশ্য অন্তত কোটা প্লেস নিয়ে ২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়া। সে জন্য দুই কোচের তাঁদের অধীনে এক শরও বেশি শ্যুটার থেকে বাছাই করতে করতে এখন ৩০ জন শ্যুটারকে নিয়ে চলছে ট্রেনিং। চলছে ট্রেনিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে তাঁদের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করা। ক্লাভস মনে করেন, ‘শুধু ট্রেনিং করলেই হবে না, সেখানে তাদের উন্নতি-অবনতি দেখার জন্য বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিতে হবে। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার টেম্পারামেন্ট তৈরি হতে হবে তাদের মধ্যে। তা ছাড়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে না গেলে অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে না নামলে তারাও বুঝতে পারবে না তারা কোথায় আছে। ’ ইরানের পর আজারবাইজানে গিয়েও বাংলাদেশের শ্যুটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বমানের শ্যুটার হয়ে উঠছেন।

n/h =ddj

প্রকাশ :মে ১৬, ২০১৭ ১২:৫০ অপরাহ্ণ