৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:১১

সেতুর অভাবে ৩০ বছর ধরে দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ৩নং হোসেনগাও ও  ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। দুই ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় কুলিক নদীর উপর ব্রিজ না থাকায় দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রামের দুই লাখ মানুষ। ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর-ব্রহ্মপুর এলাকাকে কুলিক নদী দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। স্থানীয় লোকজনের অসুবিধার কথা ভেবে এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুলিক নদীর উপর স্লুইস গেইট-কাম ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছু দিনের মাথায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় ব্রিজটি ভেঙে যায়। বন্যার পানিতে ভেসে যায় ব্রিজের উভয় পাড়ের সংযোগ সড়ক। বর্তমানে  ব্রিজের  অবকাঠামো মাঝ নদীতে পড়ে আছে ব্রিজের কংকাল হিসেবে। সে কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ব্রিজটি এলাকার মানুষের কোনো কাজে আসছে না।

বন্যায় ব্রিজের সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে নদীতে একটি বাঁশের সাঁকো দেয়া হয়েছে। শামসুল হক নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত এখানে সাঁকো মেরামত ও দেখভাল করে আসছেন। তিনি জানান, ৩নং হোসেনগাঁও ও ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের শত শত মানুষ প্রতিদিন ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদীর পশ্চিম পাশের বাজার রাউৎনগর বাজার এবং রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াত করে থাকে। নদীর পূর্বপাড়ের  বসতপুর, ব্রহ্মপুর, লেহেম্বা, শ্যামাডাঙ্গী, রওশনপুর, বিরাশি, শালবাড়ী, কোচল, মমরেজপুর, চাপোড় পার্ব্বতীপুর, বাঁশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দাদের নদীর পশ্চিম পাড়ের রাউতনগর বাজারে আসতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

রসুনপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র শাহিরুল ইসলাম জানান, সাঁকোর উপর দিয়ে সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিকশা-ভ্যান পাড়াপাড় করা গেলেও ধান পাট গম বিক্রি করতে হাটে নিতে পারি না। ভ্যানে করে পাঁচ কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে যেতে হয় রাউৎনগর বাজারে। অথচ নদীতে একটি ব্রিজ থাকলে এক কিলোমিটার পার হয়েই বাজারে যাওয়া যেত।

ব্রক্ষপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী জানান, বর্ষাকালে নদীতে যখন পানি ভরাট হয়ে যায় এবং সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে যায় তখন নৌকা এ এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। সে সময় পূর্বপাশের স্কুল কলেজগামী ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যলয়ের ১০ শ্রেণির স্কুলছাত্রী বৃষ্টি আকতার জানায়, বর্ষাকালে আমাদের বাড়ি হতে দুটি করে ড্রেস নিয়ে স্কুলে আসতে হয়। একটি ড্রেস পরে আমরা নদী পার হই। আর আরেকটি ড্রেস পরে স্কুলে যাই।

তোজাম্মেল হক নামে একজন পথচারী জানান, নদীর পূর্বপাশের আমাদের ১০ গ্রামের কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিতে ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। অথচ এখানে ব্রিজ একটি থাকলে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা সহজে ও অল্প সময়ে পৌঁছানো সম্ভব হতো।

কৃষক আজগর আলী জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে আমরা একসঙ্গে ৫/১০ মন ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন সবজি বাজারে নিতে পারি না। বেশি পরিমাণে ধান গম গম বিক্রি করতে হরে অযথা পাঁচ মাইলের বেশি রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।

রহিম উদ্দীন নামে একজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার (ইউনিয়ন পরিষদ ও এমপি) ভোটের সময় নেতারা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট শেষে তারা সবকিছু ভুলে যান। সে কারণে দীর্ঘ ৩০ বছরেও এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয়নি।

হোসেনগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুব আলম  জানান, রাউৎনগর এলাকায় কুলিক নদীতে ব্রিজ নির্মাণের জন্য অসংখ্যবার উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব তুলেছি। সি্দ্ধান্তও হয়। এলজিইডিকে দায়িত্বও দেয়া হয়। মাপা-মাপিও করা হয়। কিন্তু ব্রিজ হয় না।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাও-৩ আসনের এমপি ইয়াসিন আলী  জানান, রাউৎনগর ও বিরাশিবাজার এলাকায় কুলিক নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে সেখানে ব্রিজ নির্মাণের দাবি কয়েকবার সংসদে তুলেছি। সপ্তাহখানেক আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর মাধ্যমে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের হাতে ডিও লেটার তুলে দিয়েছি। আশা করছি এ সরকারের সময়ে রাউৎনগরে ব্রিজ নির্মিত হবে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ২৫, ২০১৭ ১২:৫২ অপরাহ্ণ