নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনার মামলার সাংসদ সেলিম ওসমানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর ধার্য করেছে আদালত। রবিবার মামলাটিতে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য থাকলেও আসামি সেলিম ওসমান অসুস্থতার জন্য সময় আবেদন করায় ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম জেসমিন আরা বেগম শুনানি শেষে সময় আবেদন মঞ্জুর করে এ তারিখ ধার্য করেন। শুনানিকালে সেলিম ওসমানের সহযোগী অপর আসামি অপু আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলাটি নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে ঢাকার সিজেএম আদালতে বিচারের জন্য বদলির নির্দেশ দেন। এরপর আদালত দণ্ডবিধির ৩২৩/৩৫৫/৫০০ ধারায় মামলাটি আমলে গ্রহণ করেন।
বিচারপতিদ্বয় আদেশে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে দেশের আইন নিরপেক্ষ ও বৈষম্য ছাড়া প্রয়োগ করা। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন, সবাই আইনের অধীন এটি আইনের শাসনের মর্মবাণী। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ওই ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। বিচারের স্বার্থে এটি যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়।
মোট ৬৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আরও নথিপত্র রয়েছে। তদন্তকালে মোট ২৭ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়। বিচারক তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এগুলো হলো- প্রথম- শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে ২০১৬ সালের ৮ মে মারধর করেছেন তা প্রমাণিত। দ্বিতীয়- ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটূক্তির সত্যতা পাওয়া যায়নি, তৃতীয়- ২০১৬ সালের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০ থেকে ১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি। চতুর্থ- ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয় যে ইসলাম ধর্ম আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে। পঞ্চম-২০১৬ সালের ১৩ মে বিকাল পাঁচটার দিকে সাংসদ সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তাঁকে গাল-কান জুড়ে দুই হাত দিয়ে পরপর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন। এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। ৬ষ্ঠ- সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হয়েছেন তা ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ওই নির্দেশ দেন।
২০১৬ সালের ১০ অগাস্ট ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের স্কুল শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় পুলিশ প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে পুরো ঘটনা বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে ২০১৬ সালের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমান সেদিন ওই শিক্ষককে কান ধরে উঠ-বস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মর্মে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তা দেখা যায়।
সরকারের মন্ত্রীরাও সে সময় সেলিম ওসমানের ভূমিকার জন্য সমালোচনায় মুখর হন। তবে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্য কোনো ‘ভুল করেননি’ দাবি করে ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ