২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩৭

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পর্যালোচনা চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় পর্যালোচনা চলছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি রায়টি পর্যালোচনা করছেন। উচ্চ আদালতের কার্যদিবস শেষে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা অবধি রায়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এই কমিটিতে দু’জন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা ও অ্যাডভোকেট মোমতাজউদ্দিন ফকির ছাড়াও সাতজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কাজ করছেন। রায় পর্যালোচনা শেষ হলেই যথাসময়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, আইন কর্মকর্তাদের একটি কমিটি রায়  পর্যালোচনা করছে। এই পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে রিভিউ পিটিশন প্রস্তুতের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।
উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে গত ৩ জুলাই রায় দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। পুনর্বহাল করা হয় সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান। রায় ঘোষণার দু’দিন পরেই এর সার্টিফায়েড কপি নেওয়ার জন্য আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দাখিল করে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। গত পহেলা আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। রায় প্রকাশের দুই মাস পর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রসঙ্গত রিভিউর আবেদন করার সময় হচ্ছে রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। সেই হিসাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে সরকারকে।
সূত্র জানায়, রায় সংগ্রহের পর গত ১২ অক্টোবর থেকে রায়টি পর্যালোচনা করছে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। পর্যালোচনাকালে ইতিমধ্যে রায়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে ওই কমিটি। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত রায় পর্যালোচনার পাশাপাশি রিভিউ পিটিশনও প্রস্তুত করা হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার মূল রায়ের পাশাপাশি আপিল বিভাগের যেসব বিচারক ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেসব অভিমতও পর্যালোচনা করছেন কমিটির আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মূল রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। রায়ে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্র ও সমাজ, সামরিক শাসন, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ও বিচার বিভাগ নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণ দেন। কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আমি ও আমিত্ব’-এর সংস্কৃতির। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরাও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে তাদের অভিমত তুলে ধরেন রায়ে। এরপরই ওই রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন সরকার ও সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। তাতে যোগ দেয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলও। এমনকি সরকার ও সরকারপন্থি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারাও প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া পর্যবেক্ষণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয়। এছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। তবে রায়কে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেয় বিএনপি ও তার সমর্থিত আইনজীবীরা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ
প্রকাশ :অক্টোবর ২১, ২০১৭ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ