দৈনিক দেশজনতা অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমারের বুচিডং এলাকা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বৃহস্পতিবার ভোরে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে ফিরেছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় এসব রোহিঙ্গারা পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমান পাড়া জিরো পয়েন্ট নাফনদী অতিক্রম করার চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাঁধা দেয়। তিন দিন ধরে অভুক্ত এসব রোহিঙ্গারা প্যারার কাড়ি, জমির আইল, চিংড়ি ঘেরের হাঁটু পানি ও ধানি জমিতে অবস্থান করায় অধিকাংশ রোহিঙ্গা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে একটি মসজিদে অস্থায়ী ভাবে বসানো মেডিকেল ক্যাম্পে অসুস্থ্যদর চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলেও তা ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল বলে দাবী করছে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা।
কুতুপালং ক্যাম্পের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করা বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বললে তারা জানায়, ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও নির্ঘুম রাত কাটানোর ফলে তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। কিছু বলার ইচ্ছা থাকলেও মুখ থেকে বের হচ্ছে না। এসময় ৫ জন ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তার ধারে গাছ তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিল বুচিডং শহরের খিয়াংধং গ্রামের অল্প শিক্ষিত রওশন আলী (৩৮)। সে জানায়, বুচিডং শহরে ৮৫টি গ্রাম আছে। তারমধ্যে মিয়ানমার জান্তারা ১৪টি গ্রাম বাদে সবকটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ ১৪টি গ্রামের অধিকাংশ পরিবার ইতিপূর্বে বালুখালী ও কুতুপালংয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
রওশন আলী আরো বলেন, তাদের গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় তারা জীবন বাজি রেখে সেখানে থাকার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মিয়ানমার সামরিক জান্তা ও রাখাইন হায়নার দল তাদের থাকতে দিল না। সাদা কার্ড ধরিয়ে দেওয়ার নামে তাদের অত্যাচার, জুলুম মারধর, ধান-চাল, সহায় সম্পদ লুটপাট শুরু করলে গত এক সপ্তাহ আগে ওই ১৪টি গ্রামের ৩০ হাজার পরিবার সীমান্তে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে পাহাড়ি পথ ধরে রওনা হয়। গত সোমবার ভোর রাতে আনজুমান পাড়া সীমান্তে এসে তারা বিজিবি’র বাঁধার মুখে আটকা পড়ে যায়। সেখানে তাদের তিনদিন থাকতে হয়েছে না খেয়ে।
বৃহস্পতিবার এসব রোহিঙ্গারা বালুখালী ও কুতুপালং এলাকায় আসতে পারলেও তাদের এখনো ছন্ন ছাড়া জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আইওএম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈকত বিশ্বাস বলেন, ‘আটকে পড়া ৩০ হাজার রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন মেডিকেল সেন্টারে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রীর কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।’
এসব রোহিঙ্গাদের তিন দিন ধরে সীমান্তে কেন আটকে রাখা হয়েছিল জানতে চাওয়া হলে বিজিবি’র এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এপারে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গার ভারে স্থানীয় সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ওই কর্মকর্তা আরো জানায়, রোহিঙ্গাদের ঢালাও ভাবে প্রবেশ করতে দিলে মিয়ানমারে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা এখানে চলে আসার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠবে। তাই এসব রোহিঙ্গাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুশব্যাক করার পরিকল্পনা নিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান সীমান্তে আটকে পড়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ফিরে আসার সত্যতা স্বীকার করেছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি