সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশে প্রত্যাবর্তন করেছেন গত বুধবার। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের এটি ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করেন তিনি। চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য গত ১৫ জুলাই লন্ডনে যান তিনি। সেখানে তিনি তার বড়ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
দীর্ঘ তিন মাস পর বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে অসার ঘটনা বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করে তুলেছে। নেত্রীকে বরণ করার জন্য বিমান বন্দরে এলাকায় নেতাকর্মীদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি সে প্রমাণই বহন করে। সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বেগম জিয়াকে বরণ করে নিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গোটা বিমান বন্দর এলাকা পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। অত্যাধিক ভীড়ের কারণে বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসভবনে পৌঁছতে বেগম জিয়ার গাড়ি বহরের প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। পর্যবেক্ষকদের মতে, বুধবার বিকালে বিমান বন্দরে মানুষের বিপুল সমাগম প্রমাণ করেছে, জনপ্রিয়তায় এ দেশে বেগম খালেদা জিয়া এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
বেগম খালেদা জিয়ার এ ফিরে আসা নানা দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যম-িত। তার লন্ডন সফরকে ঘিরে নানা ধরনের কল্পকাহিনী ছড়ানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, মামলার ভয়ে বেগম জিয়া পালিয়ে গেছেন, তিনি আর দেশে ফিরে আসবেন না। এছাড়া তারা অনবরত বলে আসছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে বসে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের এসব কথাবার্তা যে সম্পূর্ণ অসার এবং কেবলই বেগম জিয়ার ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস ছিল তা এখন পরিষ্কার। তিনি মাথা উঁচু করে দেশে ফিরে আবারো প্রমাণ করলেন, মামলা মোকদ্দমাকে তিনি ভয় পান না। জনগণের নেত্রী জনগণের পাশে ফিরে এসেছেন তাদের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে।
এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, বেগম খালেদা জিয়ার তিন মাসের অনুপস্থিতি বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি করেছিল। দলের কার্যক্রমেও পড়েছিল ভাটা। যদিও বিএনপির তরফ থেকে তা বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে। তবে, সর্বাংশে সত্যি না হলেও বেগম জিয়ার দীর্ঘ অনুপস্থিতি যে দলের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল তা অস্বীকার করা যাবে না। এখন তিনি দেশে ফিরে আসায় কর্মীদের মনোবল যে আবার চাঙ্গা হয়েছে তা বুধবারের বিমান বন্দরে বিশাল জমায়েতই বলে দিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের ফিরে আসার দিনের আরেকটি বিষয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাহলো, এদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের সমবেত হওয়ার ব্যাপারে পুলিশ তথা সরকার কোনে ধরনের বাধা সৃষ্টি করেনি। অবশ্য এর আগের দিন পুলিশের আইজি শহীদুল হকের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, বিমান বন্দরে বেগম খালেদা জিয়ার সংবর্ধনায় সরকার কোনো ধরনের বাধা-বিঘœ সৃষ্টি করবে না। সরকারের এ শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে দলগুলোর পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহাবস্থানর মনোবৃত্তি অপরিহার্য। বেগম খালেদা জিয়ার ফিরে আসার দিন সরকার যে সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে, তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সংঘাত-সংঘর্ষ বিদায় নিতে বাধ্য। দেশের আপামর জনগণও সে প্রত্যাশাই করে। জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলো আগামীতে অধিকতর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিবে বলে আমরা আশা করি।