৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:২৪

ব্রহ্মপুত্রের নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে রৌমারীর মানচিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ব্রহ্মপুত্রের ভাঁঙ্গনে রৌমারীর মানচিত্র নদ-নদীতে পরিণত হতে চলছে। আজ থেকে ২যুগ পূবে রৌমারী উপজেলা হতে ব্রহ্মপুত্র পারের দূরত্ব ছিল প্রায় ৩০ কিলোমিটার। আজ কালের আবর্তে অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে রৌমারী উপজেলা হতে ব্রহ্মপুত্র পারের দূরত দাড়িয়েছে ২কিলোমিটার। ভাঙ্গন রোধে সরকারের কোন শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা না থাকায় প্রতি বছরই ব্রহ্মপুত্রের ভাঁঙ্গনে বিলীন হয়েছে, শত শত একর ফসলী জমি বসত ভিটা। এমন ভাঁঙ্গনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় ক্রমান্বয়ে আবাস ভ’মি,মানচিত্র থেকে কমে নদ-নদীতে পরিনত হচ্ছে। রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা ২টি কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উপজেলা ২টি ব্রহ্মপুত্রের পূর্ব পারে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া। কিন্ত ভারতের আসাম থেকে বয়ে আসা ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রামের উলিপুরের ১০৪৭ ও রৌমারীর ১০৫২ আর্ন্তজার্তিক সীমানা পিলার ভেদ করে ব্রহ্মপুত্রে প্রবেশ করেছে।

ব্রহ্মপুত্র নদটি উজান থেকে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের সাহেবের আলগার পশ্চিম উত্তরে ভারত, বাংলাদেশ আর্ন্তজাতিক সীমান্ত পিলার ১০৪৭ হতে রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা অংশের ১০৫২ পিলার ভেদ করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে। এদিকে নদটির পানি সহজে দ্রুত প্রবাহের লক্ষ্যে যুগযুগ ধরে কোন খনন কার্য না করায় নদটি প্রায় বালুচরে পরিণত হয়েছে। যারফলে বর্ষ শুরু ও বর্ষ শেষের সময় পানি দ্রুতপ্রবাহিত হতে না পারায় দূর্বার গতিতে দুকুল ভাঙ্গতে থাকে।

যার পরিনতি ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।উত্তরে দাঁতভাঙ্গার সাহেবের আলগা হতে দক্ষিনে রাজিবপুর উপজেলা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পুর্ব তীর প্রায় ৪০কিলোমিটার। এদুটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবার ২যুগে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ৩০কিলোমিটার জুড়ে ফসলী জমি বাপ,দাদা, সাত পুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের ভিটায়, বাঁধের ধারে কেহ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাঁচার তাগিদে বস্তির ঝুপরিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যেভাবে নদী ভাঁঙ্গছে এতে আশংকা করা হচ্ছে আগামী ১দশকের মধ্যে রৌমারী ও রাজিবপুর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে আবাস ভুমি।

রৌমারী স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল।বিশিষ্ট জনদের মতে এক সময় এসব নদী, বর্ষা মৌসুমে তার ¯্রােত ধারার সাথে পলি মাটি ফসলী জমিতে পড়ে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করত। সে সময় ভারতের সাথে নদী পথের যোগাযোগ ছিল উন্মুক্ত। এখন আর বানের স্রোতে ভেসে আসেনা পলি মাটি। ভারতের অভ্যন্তরে অসংখ্য বাঁধ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি প্রবাহের গতিপথ বন্ধ করে দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি যেমন খুশি তেমন ভাবে প্রবাহিত হতে পারেনা। যেহেতু ব্রহ্মপুত্রের উজানের মুখটি ভারতের সাথে সংযুক্ত, তাই বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে প্রচন্ড বেগে বয়ে আসা পাহাড়ী ঢল ১০৪৭ থেকে ১০৫২ আন্তজাতিক সীমান্ত পিলার দিয়ে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রে এসে মিলিত হয়।

ব্রহ্মপুত্রের কড়াল গ্রাসে রৌমারী তথা চিলমারীর হাজার হাজার একর ফসলী জমি, সাত পুরুষের ভিটে মাটি, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিলীন হয়েছে অসংখ্য স্থাপনা। ভাবতেও অবাক লাগে বৃটিশ শাসনের আড়াইশ বছর, পাকিস্তানের ৪৭ ও বাংলাদেশের ৪৪ বছর অতিবাহিত হলেও নির্মাণ হয়নি ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা বাঁধ। নির্বাচন এলেই প্রতিনিধিরা যোগাযোগ সড়ক, নদী শাসন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ির পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া গেয়ে ভোট নিয়ে নেতা হয়ে গাড়ী, বাড়ি, অট্টালিকা, শিল্পকারখানা, আর বিদেশী ব্যাংকে টাকা জমানোর বিভোর স্বপ্নে ভুলে যান অতিতের চাটাইয়ে শুয়ে থাকার কথা।

এই চরাঞ্চলের ঘনবসতি পুর্ণ কিছু পরিবার ব্রহ্মপুত্রের সাথে যুদ্ধ করে আকড়ে ধরে অছেন ওই চরের বালু মাটি। যেখানে ফলে শুধু কাউন, চিনা, তিল, তিশি, বাদাম। এদের নেই সুপেয় পানির ব্যাবস্থা, স্যানিটেশন, শিক্ষা ও যোগাযোগ সড়কের। কে শুনবে রাজিবপুর, রৌমারীর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের আঁকুতি।

বিশিষ্ট জনদের মতে ব্রহ্মপুত্র নদটিকে অপার সম্ভাবনা হিসেবে ধারণা করা হয়েছে। তাদের মতে হাজার হাজার হেক্টর জমি ব্রহ্মপুত্রের বুক চিড়ে রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রকে আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে সরকারের মাধ্যমে নদী শাসন পরিকল্পনা ম্যাপ তৈয়ারী করতে হবে। যেখানে থাকবে নদীর দৈর্ঘ-প্রস্ত সীমারেখা নির্ধারণ। দুই উপজেলার সীমানা নিধারণ করে উভয় অংশের সমপরিমাণ জায়গা নিয়ে নদীর প্রস্ত নির্ধারণ করা। সীমানা অনুসারে দুই পাড়ে লোহার পাত উজান থেকে দক্ষিণে ১শ ফুটপাত একটার সাথে একটা লাগোয়া মাটিতে ডাবাতে হবে। বন্যা সহনশীল অনুসারে উচ্চতা রাখতে হবে। পাইলিং শেষে মাঝখান থেকে ড্রেজিং করে দুই পারে মাটি ভরাট করে সেখানে শিল্প কারখানা, পর্যটন কেন্দ্র, আবাস স্থল ও ফসলী জমি করা যেতে পারে। উক্ত ভূমি শ্রেণি মোতাবেক লীজ প্রদান করে সরকার প্রচুর রাজস্ব পেতে পারে। নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পেলে আর্ন্তজাতিক ভাবে জাহাজ আপ-ডাউন করে ব্যাপক বাণিজ্য করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ১৯, ২০১৭ ১২:১৯ অপরাহ্ণ