২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩২

বিশ্বকে পরিবেশগত দিক থেকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত : শি জিনপিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জানিয়েছেন, তার দেশ সামনের দিনগুলোয় বিশ্বকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও পরিবেশগত দিক থেকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। চীনকে ‘ক্ষমতাধর শক্তিতে’ পরিণত করার সময় এসেছে মন্তব্য করে তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে তার দেশকে বদলে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও সিএনএনের।

বুধবার বেইজিংয়ে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম পঞ্চবার্ষিক কংগ্রেসে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

জিনপিং বলেন, কয়েক দশকের বিরামহীন সংগ্রামের ফলে চীন এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ৬৪ বছর বয়সী এ নেতা বলেন, চীনের উন্নয়নে এখন এক ঐতিহাসিক যুগসন্ধিক্ষণ চলছে। চীনা জাতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং শক্তিধর হয়েছে। ভবিষ্যতে মানবজাতির কল্যাণে চীন বৃহত্তর ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন জিনপিং।

জিনপিংয়ের এ মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক বক্তব্য ও কর্মসূচির বিপরীত। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে অটল ট্রাম্প তার দেশকে বিশ্ব নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে নিতেই যেন বদ্ধপরিকর। ভাষণে জিনপিং বলেন, চীনারা একটি মহান জাতি। কঠোর পরিশ্রম ও দুর্ভোগে তারা দমে যায়নি। তারা পরিশ্রমী ও সাহসী এবং অগ্রগতি সাধনে বিরামহীন।

গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ভাষণে জিনপিং আরও বলেন, ‘চীন অন্যের ওপর নিজের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেয়ার বিরোধিতা করে। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে চীন হস্তক্ষেপ করে না এবং দুর্বলের ওপর শক্তিধর দেশগুলোর শক্তিমত্ত প্রদর্শনেও বিরোধী।’ তিনি মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং এবং হংকং ও তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি প্রতিনিধি। রুদ্ধদ্বার এ সম্মেলনেই ঠিক হবে পরবর্তী মেয়াদে কে চীনের নেতৃত্ব দেবেন এবং দেশটির গতিপথ নির্ধারণ করবেন। প্রতি পাঁচ বছর পর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে পার্টির নেতা হয়েছিলেন জিনপিং। পরবর্তী পাঁচ বছরে তিনি নিজের ক্ষমতা আরও দৃঢ় করেছেন এবং তিনিই পার্টিপ্রধান রয়ে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছর চীন কোন রোডম্যাপ অনুযায়ী চলবে, তা-ও কংগ্রেসে নির্ধারিত হবে। এটা আগামী সপ্তাহে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কংগ্রেস শেষ হওয়ার পর কমিউনিস্ট পার্টি চীনের শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পরিষদ পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ কমিটিই দেশটি পরিচালনা করবে।

তার মেয়াদে চীনের অর্জনগুলো উল্লেখ করে নিজের ভাষণ শুরু করা জিনপিং বলেন, সমাজতন্ত্রের চীনা বৈশিষ্ট্য ‘একটি নতুন অধ্যায়ে’ প্রবেশ করেছে। নিজেদের ভাগ্যকে সব সময় জনগণের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়ার, জনগণের জন্য উন্নত জীবনের কথা সব সময় মনে রাখতে পার্টির সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এর পাশাপাশি দলের ভেতরে তার চালানো ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন জিনপিং। তার দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযানে দেশটির ১০ লাখেরও বেশি কর্মকর্তা শাস্তি পেয়েছেন।

কমিউনিস্ট পার্টির এ কংগ্রেস উপলক্ষে স্বাগত জানানো ব্যানার ও উৎসবের আবহ সংবলিত বিলবোর্ডে বেইজিংকে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিক থেকেই রেলস্টেশন ও পরিবহনের কেন্দ্রগুলোয় শুরু করা অতিরিক্ত তল্লাশির জন্য যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে রেস্তোরাঁ, জিম, নাইট ক্লাব ও কারাওকি বারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থলে হোটেল বুকিংও বাতিল করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ কংগ্রেসে জিনপিং পার্টিতে নিজের অবস্থান আরও সংহত করবেন বলে বিশ্বাস অনেক বিশ্লেষকের। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, জিনপিংয়ের ‘কর্ম প্রতিবেদন’ বা রাজনৈতিক চিন্তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজেদের সংবিধান নতুন করে লিখতে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। এতে নেতা হিসেবে জিনপিং পূর্ববর্তী দিকপাল পার্টি নেতা মাও সেতুং এবং দেং শিয়াওপিংয়ের উচ্চতায় উন্নীত হবেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই জিনপিং সেন্সরশিপ বৃদ্ধি এবং আইনজীবী ও আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার বৃদ্ধির মাধ্যমে পার্টি ও চীনা সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করেছেন। তার নেতৃত্বে চীনের আধুনিকায়ন এবং সংস্কার গতিশীল হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চীনের প্রভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরো সময় সাধারণ চীনা জনগণের বিপুল সমর্থনও পেয়ে এসেছেন তিনি।

 

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ১৯, ২০১৭ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ