নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের সার্বিক দরিদ্র্য হার কমলেও কিছু জেলাতে এই হার বেড়েছে। খানা আয় ব্যয় জরিপের তথ্যানুযায়ী দেশের সবচেড়ে বেশি গরীব মানুষ বাস করছে কুড়িগ্রামে। এই জেলার ৭০ দশমিক ৮ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ২০১০ সালেও এই অঞ্চলের ৬৩ দশমিক ৭ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে ছিল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সদ্য প্রকাশিত ‘খানা আয় ব্যয় জরিপ-২০১৬’ এর তথ্যে দেখা গেছে, দেশের উত্তর বঙ্গের মঙ্গাপীড়িত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলায় দারিদ্র্যের হার না কমে বরং বেড়ে গেছে। ২০১০ সালে লালমনিরহাটে সাড়ে ৩৪ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছিল। ২০১৬ সালে এই হার বেড়ে ৪২ ভাগ হয়েছে। নিলফামারী জেলায় দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালে ৩৪ দশমিক ৮ ভাগ থেকে ২০১৬ সালে মাত্র ৩২ দশমিক ২ ভাগে নেমে এসেছে। গাইবান্ধায় দারিদ্র্য হার কিছুটা কমেছে, সেটিও এক শতাংশের কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের কিছু জেলায় দারিদ্র্যের হার ব্যাপক হারে কমেছে। সেজন্য জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ ভাগ হতে ২০১৬ সালে ২৪ দশমিক ৩ ভাগে নেমে এসেছে। তবে উত্তরবঙ্গের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলের কিছু জেলায় দারিদ্র্য হার কমছে ধীরে। রংপুর জেলায় ৪৬ দশমিক ২ ভাগ হতে দারিদ্র্য হার এই ছয় বছরে ৪৩ দশমিক ৮ ভাগে নেমে এসেছে। গাইবান্ধায় সামান্য কমে ৪৬ দশমিক ৭ ভাগ হয়েছে। তবে ব্যাপক হারে কমেছে বরিশাল অঞ্চলের দারিদ্র্য। ২০১০ সালের ৫৪ দশমিক ৮ ভাগ হতে ২০১৬ সালে বরিশালের দারিদ্র্য হার ২৭ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আগের চেয়ে বরং বেড়েছে।
জরিপ প্রকল্পের পরিচালক দিপঙ্কর রায় বলেন, ২০১০ সালে দেশের ১২ হাজার ২৪০টি নমুনা এলাকায় জরিপটি করা হয়েছিল। এবার ২০১৬ সালে ৪৬ হাজার নমুনা এলাকায় জরিপ করা হয়েছে। সেজন্য জেলা ভিত্তিক তথ্যে ভিন্নতা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ‘পভার্টি ম্যাপ’ করা হলে আরো স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া যাবে বলে তিনি মনে করেন।
জরিপকালে দৈনিক খাদ্য গ্রহণের ভিত্তিতে দারিদ্র্য হার নিরূপণ করা হয়েছে। এতে ১১টি খাদ্য উপাদানের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি পরিবারে জনপ্রতি প্রতিদিন ২১২২ কিলো ক্যালরি গ্রহণ করতে না পারলে সেক্ষেত্রে তাদের দরিদ্র গণ্য করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালে মোট খাদ্য গ্রহণের হার পূর্বের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
২০১০ সালে দৈনিক খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ছিল গড়ে এক হাজার গ্রাম, যা ২০১৬ সালে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ গ্রাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী চাল ও আটা গ্রহণের হার কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে ডাল, শাক-সবজি, মাংস ও ডিম খাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০ সালে দৈনিক ২৩১৮ কিলো ক্যালরি গ্রহণ করা হলেও ২০১৬ সালে গ্রহণ করা হচ্ছে ২২১০ কিলো ক্যালরি। প্রোটিন গ্রহণের হার ২০১০ সালে ছিল ৬৬.২৬ গ্রাম এবং ২০১৬ সালে এটি কমে হয়েছে ৬৩.৮০ গ্রাম।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ