২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:২৪

গার্মেন্টসে মজুরি বৃদ্ধির চাপ জোরালো হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন করে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে বিভিন্ন শ্রমিক অধিকার সংগঠন স্বোচ্চার হচ্ছে। এ জন্য দ্রব্যমূল্য ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণকে সামনে আনা হচ্ছে। এ দাবিকে জোরালো করতে শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় কিছু সংগঠন শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামতও নিচ্ছে। ইতিমধ্যে পোশাক শিল্প মালিকদের একাধিক সংগঠন বিজিএমইএ ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে চিঠিও পাঠিয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি) দ্রুত মজুরি বোর্ড পূনর্গঠনের দাবিতে বিজিএমইএকে চিঠি পাঠিয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে তারা শ্রম মন্ত্রণালয়েও চিঠি পাঠাবে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত শনিবার আইবিসি’র প্রতিনিধিরা বিজিএমইএ’র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ দাবি তুলে আন্দোলনের প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গণ থেকেও মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আওয়াজ উঠেছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালের জুনে সরকার এ খাতের শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করেছিল। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৩শ’ টাকা মজুরি কার্যকর হয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মজুরি বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। সেই হিসেবে আগামী বছরের জুন নাগাদ মজুরি বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। কিন্তু কিন্তু সমপ্রতি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির কারণে আগেই এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব তৌহিদুর রহমান।

মজুরি বৃদ্ধির দাবির বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।  তিনি বলেন, সমপ্রতি একটি বৈঠকে মজুরি বৃদ্ধির ইস্যুটি শ্রমিক নেতারা তুলেছেন। আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু মনে করেন, পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মজুদ্ধি বৃদ্ধি বা মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনের সুযোগ নেই। এখন চার বছর হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কিছু শ্রমিক সংগঠন মজুরি বাড়ানোর জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু কেউই শ্রম আইন অনুযায়ী পাঠায়নি।

অবশ্য বিজিএমইএ’র এক নেতা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। আবার আমাদের সামর্থ্যও দেখতে হবে। মজুরি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তবে ঘোষণা হওয়ার অন্তত ছয় মাস পর তা কার্যকর করার সময়সীমা থাকতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিদেশী ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে দর বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হবে। দর বৃদ্ধি না করা গেলে এবং টিকতে না পারলে ওই সময়ের মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

আইবিসি থেকে বিজিএমইএ সভাপতিকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্দ্ধগতি, চালের সীমাহীন মূল্যবৃদ্ধি ও বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে ৪৫ লাখ শ্রমিকের জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে, যা এ শিল্পের জন্য ইতিবাচক নয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে নতুন সর্বশেষ নিম্নতম মজুরি কার্যকর করা হয়। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ করে আইবিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সরকার যে কোন পর্যায়ে নতুনভাবে নিম্নতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার জন্য মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে নতুন মজুরি ঘোষণা করতে পারে। মাঠ পর্যায়ে শ্রমিকদের কোনরূপ আন্দোলন বা অসন্তোষ গড়ে উঠার আগেই এ মজুরি বোর্ড গঠনের অনুরোধ জানানো হয়।

তৌহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগামী নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর পর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। তিনি আইবিসি’র একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, গত দেড় বছরের ব্যবধানে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে দেড়শ শতাংশ। গত জানুয়ারের পর কিছু এলাকায় বাড়িভাড়া বেড়েছে দুই দফায়। সমপ্রতি বাড়িভাড়া ইস্যুতে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভও করেছে।

এর আগে গত জানুয়ারিতে আশুলিয়া এলাকায় বাম ঘরানার কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন গার্মেন্টস খাতে নিম্নতম ১৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে সরকার হাডলাইনে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ওই ইস্যুতে ইউরোপের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় মালিকপক্ষকে।

অবশ্য মজুরি বৃদ্ধির দাবি থাকলেও আগামী নভেম্বরের মধ্যেই নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যেও। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি মনে করেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবি যৌক্তিক হলেও আগামী জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।

দেশে এ খাতের শ্রমিকদের জন্য ১৯৮৪ সালে প্রথম মজুরি ঘোষণা করা হয়। ওই সময় শ্রমিকদের ন্যুনতম মোট মজুরি ছিল ৬৩০ টাকা। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে ৯৩০ টাকা, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৬৬২ টাকা, ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা ও ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩শ’ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, বিশ্বে এখনো বাংলাদেশেই শ্রমিকের মজুরি সবচেয়ে কম। ডলারের হিসেবে গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশে মজুরি প্রায় ৬৮ ডলার। মায়ানমারে ৯৭ ডলার। কম্বোডিয়ায় ১৭০ ডলার, ভিয়েতনামে ১৬০ ডলার, চীনে ২২৩ থেকে ২৪০ ডলার, ভারতে রাজ্যভেদে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার রুপি এবং পাকিস্তানে প্রায় ১৫ হাজার রুপি।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ১৮, ২০১৭ ৪:০১ অপরাহ্ণ