২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:০২

বন্যারোধে ১৬ নদী খননের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

হাওরবেষ্টিত সাত জেলায় বন্যারোধে ১৬টি নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাওর উন্নয়নের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতর (বিআইডবি্লউটিএ) এ উদ্যোগ নিয়েছে। খনন (ড্রেজিং) করে নদীগুলোর গভীরতা বাড়াতে সংস্থাটি সমীক্ষা চালাবে। সংশি্লষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশি্লষ্টরা জানান, খনন করে গভীরতা বাড়ানো হলে নদীগুলোর পানির প্রবাহ বাড়বে। ফলে কৃষিজমি ও বন্যার পানিতে লোকালয় ডুবে যাওয়ার শঙ্কা কমে আসবে। পাশাপাশি নৌপথে পণ্য পরিবহন, মাছ চাষ ও ওই সব জেলায় কৃষিকাজে সেচ সুবিধা বাড়বে। সম্প্রতি ওই সব এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাওর এলাকার নদী খননের সদ্ধিান্ত নেয়া হয়।
বিআইডবি্লউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বলেন, হাওর এলাকার নদীগুলোতে পলি জমে গভীরতা কমে গেছে। এর ফলে বন্যায় পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে তা লোকালয়ে চলে আসছে। ওই এলাকায় বন্যার প্রকোপ কমাতে নদী খননের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে কী পরিমাণ নদী খনন করতে হবে, তা নিরূপণ করতে সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব নৌ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সংশি্লষ্ট সূত্র জানায়, হাওরবেষ্টিত হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬টি নদী খনন করা হবে। নদীগুলো হল- মেঘনা, খোয়াই, রক্তি, সুতাং, বাউলাই, সুরমা, কংস, জাদুকাটা, পাগলা, বুড়ি, যমুনা, তিতাস, মগরা, মনু, কালনি ও কুশিয়ারা।
চলতি বছরের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ নদীগুলো খননের সদ্ধিান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ১২ জুন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে আরেক সভায় বিআইডবি্লউটিএর আওতাধীন নদীগুলো দ্রুত খননের তাগিদ দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাওর এলাকার নদীগুলো খননের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি (সমীক্ষা) করতে প্রকল্প তৈরি করেছে সংস্থাটি।
এসব নদী খনন যৌক্তিকতা তুলে ধরে সমীক্ষা প্রকল্পের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, হাওর এলাকার নদীগুলোতে ক্রমান্বয়ে পলি পড়ে বর্তমানে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা অনেকাংশে কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বন্যায় ফসলি জমিসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে হাওর অঞ্চলের লোকজন যেমন ফসলহানির ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি নাব্য সংকটে শুষ্ক মৌসুমে নৌ-চলাচল বন্ধ থাকছে। নদী খননে যেসব সুবিধা পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে সার-সংক্ষেপে বলা হয়, নদী খননের ফলে সারা বছর নৌপথে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এছাড়া পর্যটন শিল্প, সেচ ব্যবস্থা, ভূমি ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাস্তুসংস্থান ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এছাড়া নদীগুলোর সঙ্গে নৌ-বন্দরেরও উন্নয়ন হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডবি্লউটিএর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নদীগুলোর বর্তমান গভীরতা নির্ণয়, গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, ড্রেজিংয়ের পরিমাণ ও অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ এবং ড্রেজিং স্পয়েল প্রতিস্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হবে। এসব সহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সমীক্ষা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কনসালটেন্টরা আগামী এপ্রিলের আগেই প্রতিবেদন জমা দেবেন। ওই প্রতিবেদনের আলোকে নদী খননের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হবে। হাওর এলাকার এসব নদী খননে কত টাকা ব্যয় হবে, তা ডিপিপিতে নির্ধারণ করা হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :অক্টোবর ১৬, ২০১৭ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ