কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও এনজিওর কাছ থেকে পাওয়া ত্রাণসামগ্রী অবাধে বিক্রি করছে। বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে এসব ত্রাণপণ্য কিনছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। এর প্রভাবে স্থানীয় দোকানগুলো কিছুটা মন্দাক্রান্ত। ত্রাণের পণ্য কিনতে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। এমনও হয় ত্রাণের পণ্য কিনতে গিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব ত্রাণ কিনে প্রথমে তা স্থানীয় দোকান ও বাসাবাড়িতে মজুদ করে। পরে সুবিধামতো সময়ে জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে পাচার করে।
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে সিন্ডিকেট সদস্যরা ত্রাণের মাল একত্রে পাচার না করে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন গাড়িতে করে দেশের নানা স্থানে পাঠাচ্ছে। সরেজমিনে কুতুপালং, লম্বাশিয়া, বালুখালি, থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। খোজঁ নিয়ে জানা যায়, স্বাভাবিক হিসেবে বর্তমান বাজারমূল্যে এখন এক কেজি চালের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। রোহিঙ্গারা ত্রাণের চাল বিক্রি করছে ৩২-৩৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া ৬০ টাকা কেজির চিনি ৩০ টাকায়, ১১০ টাকা কেজির ডাল ৭০ টাকা, ১২০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ৬০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের ডানো দুধের প্যাকেট ১০০ টাকায় বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা।
কুতুপালং এলাকার মুদি দোকানি আক্কাছ আলী ও সফর আলী জানান, প্রথম দিকে রোহিঙ্গারা এ এলাকায় আশ্রয় নেয়ার পর তাদের দোকানে বেচাবিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। অনেক সময় বেশি দামেও পণ্য বিক্রি করেছেন তারা। আড়তদারের কাছ থেকে মালামাল এনে দোকানে মজুদ করতে না করতে বিক্রি শেষ হয়ে যেত। এখন আর সেভাবে বিক্রি হয় না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল বিক্রি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সেখান থেকে কিনতে ঝুঁকছে।
রোহিঙ্গাদের ত্রাণসামগ্রী বিক্রির কারণ হিসেবে বালুখালীতে আশ্রয় নেয়া রাখাইনের মেরুল্যা গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ নজির হোসেন বলেন, ‘ঘরে উদ্বৃত্ত ত্রাণ আছে। এখন টাকার দরকার, তাই ত্রাণ বিক্রি করছি।’ কুতুপালং বাজারে চাল বিক্রি করতে এসেছেন রোহিঙ্গা ছলেমান। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ দিনে তার বাসায় পাঁচ বস্তা চাল জমা হয়েছে। কিন্তু হাতে টাকা নেই। তিনি বলেন, ‘এত চাল কী করব। এত চাল আমাদের লাগবে না। তাই নগদ টাকার জন্য কিছু বিক্রি করছি।’ এভাবে প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সিন্ডিকেট সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণসামগ্রী কিনতে গড়ে তুলেছে ক্যাম্পভিত্তিক গোপন ক্রয়কেন্দ্র।
অনেক দোকানি জানান সিন্ডিকেট ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় অনেক বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণের মাল সস্তায় কিনছেন। আর তাতে স্থানীয় দোকানগুলোতে এর কিছুটা প্রভাব পড়ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র বর্মিদের হত্যা-নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে সারা দেশ থেকে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ছুটে আসে ত্রাণ নিয়ে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করেন। বিদেশ থেকেও আসে ত্রাণসামগ্রী। খাদ্য সহায়তায় এগিয়ে আসে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ফলে যথেষ্ট ত্রাণসহায়তা পায় রোহিঙ্গারা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ সহায়তার জন্য শিবিরগুলোর দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের নাম নিবন্ধনের কাজ চলছে। আশ্রয়শিবিরের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বরাদ্দ দিয়েছে প্রায় তিন হাজার একর জায়গা।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি