কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া প্রতিনিধি :
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এইচআইভি ও এইডস, যক্ষ্মা, হাম, পোলিও, কলেরা ও ডায়রিয়াসহ অজ্ঞাত নানা রোগ ও জীবাণুতে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ কারণে আগে থেকেই এসব রোগ প্রতিরোধে টিকা ও চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেছে সরকার।
মিয়ানামারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরুর পর এখন পর্যন্ত সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে নির্ধারিত জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্প। তবে এই রোহিঙ্গারা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে ১৯ জন এইচআইভি পজেটিভ ব্যক্তি। তাদের পৃথক করে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সম্প্রতি একজনের মৃত্যুও হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে এবং বিপন্ন মানুষের মাঝে চিকিৎসা সেবা দিতে সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে চিকিৎসা ক্যাম্প। এসব চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। এইচআইভি ছাড়াও হাম, যক্ষ্মা, পোলিও, কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু প্রতিরোধে টিকা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে কলেরা প্রতিরোধে ৯ লাখ রোহিঙ্গাকে টিকা খাওয়ানোর কাজ শুরু হয়েছে।
উখিয়ার বালুখালীর জুমের ছরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা মরিয়ম, সলিম উল্লাহ ও আব্দুল খালেক জানান, দীর্ঘদিন ধরে কারও শরীরে জ্বর, কারও মাথা ব্যাথা ও কেউ বা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন। ক্যাম্পে ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে তারা মহাখুশি।
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুরা। বিশেষ করে মঙ্গলবার কলেরা প্রতিরোধ ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে সরকারের শুরু করা কর্মসূচির টিকা খেতে আসেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তাদের অনেকেই জানান, জীবনে এই প্রথম কোনও রোগের জন্য টিকা খাচ্ছেন। তাও বাংলাদেশে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের মাঝে হাম, পোলিও, যক্ষ্মাসহ নানা রোগের টিকা ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে টিকা খাওয়ানো হয়েছে। এছাড়া স্যানিটেশন, সুপেয় পানি সরবরাহ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করা হয়েছে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনও পুরোদমে তৈরি হয়নি। আস্তে-ধীরে সব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্যানিটেশন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এতে করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। তবে না খেয়ে ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে কোনও রোহিঙ্গা মারা গেছে এরকম কোনও খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক ‘এইচআইভি’ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। ইতোমধ্যে ১৯জন ‘এইচআইভি’ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। এরমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি কলেরা রোগের ঝুঁকিতেও রয়েছে রোহিঙ্গারা। কারণ কলেরা রোগ একটি মহামারি আকারের সংক্রামক রোগ। এই রোগ দেখা দিলে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাই, আগে থেকেই এই রোগের টিকা কার্যক্রম শুরু করে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ছয় লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে কলেরা রোগের টিকা খাওয়ানো হবে। এরপর আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরও দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে এই টিকা খাওয়ানো হবে।’
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ