নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় চালসহ কাঁচামরিচের দাম কমেছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে পিয়াজের দাম। কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। এছাড়া বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে এসব চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বিক্রেতারা জানিয়েছেন, মাস খানেকের মধ্যে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার মনিটরিংয়ের অভাবেই নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য।
বাজার পর্যালোচনায় জানা গেছে, কোরবানির ঈদের আগে পিয়াজের দাম বাড়লেও পরে তা কমে যায়। তবে গত এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আবারও পিয়াজের দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশি পিয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় এবং ভারতীয় পিয়াজ ৫০ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে দেশি পিয়াজ ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় ও ভারতীয় পিয়াজ ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের কৃষকদের ঘরে এখন আর দেশি পিয়াজের তেমন মজুত নেই। ফলে আমদানি করা পিয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ভারতে গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে। তাই দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে।
ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও পিয়াজ আমদানিকারক মাজেদুর রহমান জানান, ভারতে পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয়সহ অন্য খরচ যোগ করলে ৪৫ টাকা পড়ে। ফলে প্রতিকেজি দেশি ও আমদানি করা পিয়াজ ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা আগে ৩০ থেকে ৩২ টাকা ছিল।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি করা দুই ধরনের পিয়াজের দামই বেড়েছে। টিসিবি’র বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, এক মাসে আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ এবং সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের পিয়াজের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবি’র তথ্যমতে, এক সপ্তাহ আগে আমদানি করা পিয়াজের কেজি প্রতি দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা। বর্তমানে এই মানের পিয়াজের দর ৪৫-৫২ টাকা। এ সময়ে দেশি পিয়াজের দাম ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। বর্তমানে এই মানের পিয়াজের দর ৪৮-৫৫ টাকা। আর বছরের ব্যবধানে আমদানি করা পিয়াজের দাম বেড়েছে ৭৬.৩৬ শতাংশ। দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৩৭.৩৩ শতাংশ। এক বছর আগে আমদানি করা পিয়াজের কেজি প্রতি দাম ছিল ২৫-৩০ টাকা। বর্তমানে এই মানের পিয়াজ ৪৫-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছর আগে দেশি পিয়াজের কেজি প্রতি দাম ছিল ৩৫-৪০ টাকা। বর্তমানে এই মানের পিয়াজ ৪৮-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে বছরে ২২ লাখ টন পিয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা মূলত ভারত থেকে আমদানি হয়। ভারতে দাম বেশি হলে পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। সমপ্রতি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির অযুহাতে দাম বৃদ্ধির রেকর্ড ছাড়ায় কাঁচামরিচ। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকাও বিক্রি হয়।
বাজারে কিছুটা দাম কমেছে কাঁচামরিচের। গত সপ্তাহের এক টাকায় মিলছিলো ৫ থেকে ৬টি কাঁচামরিচ, এ সপ্তাহে এসে ঝাল কমেছে এ নিত্যপণ্যটির। প্রায় অর্ধেকে নেমেছে দাম। কাঁচামরিচ এখনও ১৪০ টাকা কেজি দরের নিচে মিলছে না। বাজারগুলোতে কাঁচামরিচের বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। তবে কোনো কোনো বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতাদের দাবি, এ সপ্তাহে নতুন করে বৃষ্টি না হওয়াই কাঁচামরিচের সরবরাহ বেড়েছে। সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে দাম আরো কমবে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি প্রায় ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। টিসিবি’র মূল্য তালিকায় দেখা গেছে, ভালো মানের মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬৫-৬৮ টাকা, নরমাল মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা, ভালো মানের বিআর২৮ কেজিপ্রতি ৫৬-৫৮ টাকা, নরমাল বিআর২৮ ৫০-৫৬ টাকা, মোটা স্বর্ণা চাল ৪৫-৪৮ টাকা। চড়া দাম সব শাক-সবজির। বেশ কিছুদিন ধরে, বিক্রেতারা জানিয়েছে বাজারের যে কোনো সবজি কিনতে খরচ হতো কমপক্ষে ৫০ টাকা। শীতের আগে সরবরাহ না বাড়লে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
বাজারে প্রতিকেজি পটল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ঢেঁড়স ৭০ টাকা ও বেগুন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি টমেটো ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। শিমও আগের সপ্তাহের মতো ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শসা ৮০ টাকা, করলা কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি ৩৫ টাকা, গাজর ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পুঁইশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ১০ টাকা ও লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, ধনে পাতা আটি ১০ থেকে ১৫ টাকা। আলু ২০ টাকা কেজি।
সবজি বিক্রেতা করিম বলেন, শীতকাল শুরু না হলেও শীতের কিছু সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। ফলে সামনে দাম কমতে পারে। এদিকে গরু ও খাসির মাংস বাজারে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আগের মতোই ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭৫০ টাকা কেজি দরে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি