২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৪৭

৩ শতক জমির জন্য মাকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাল ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাত্র তিন শতক ভিটেমাটির জন্য গর্ভধারিণী বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে ছেলে। আহত মা শরিফন নেছা (৬৫) এখন হাসপাতালে। শুক্রবার জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল দেখতে যান সেই মাকে। তাৎক্ষণিক তিনি আইগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। পরে বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। বৃহস্পতিবার বোদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুতার পাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার সুতার পাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সত্তোর্ধ আব্দুর রাজ্জাক এবং তার স্ত্রী শরিফন নেছা (৬৫) ছোট ছেলে আইজুল হকের সঙ্গে ওই গ্রামের একই বাড়িতে বসবাস করতেন। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সকলের বিয়ে দিয়েছেন তারা। বড় ছেলে আশরাফুল বিয়ে করে অন্যত্র বাড়ি করেছেন।

পেশায় ভ্যানচালক ছোট ছেলে আইজুলকে নিজের আড়াই বিঘা আবাদি জমি লিখে দেন বাবা-মা। কিন্তু তারপরও তার সংসারে দু’মুঠো খাবার জোটেনি বৃদ্ধ বাবা মায়ের। বাধ্য হয়ে কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজেই সংসার চালাতেন শরিফন। কিন্তু ইতোমধ্যে মায়ের নামে থাকা তিন শতক ভিটেমাটিও নিজের করে নিতে পর্চা কেটে নেন ছোট ছেলে আইজুল ইসলাম। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরে ঝগড়া চলছিল মা-ছেলে এবং পুত্রবধূ ইতির সঙ্গে।

অবশেষে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে কথাকাটির এক পর্যায়ে বৃদ্ধা মাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আইজুল। লাঠির আঘাতে মায়ের হাত কেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। ছেলের পিটুনি সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে বাড়ির পাশের একটি মুদি দোকানে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা মা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শরিফনের প্রতিবেশীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যান ছেলে আইজুল।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে শরিফন বলেন, ছোট ছেলে আইজুল তার বৌ বাচ্চা নিয়ে আলাদা খায়। তাদের সুখের জন্য নিজের শেষ সম্বল আড়াই বিঘা জমি লিখে দেই। বড় ছেলে আশরাফুলকে কিছুই দিতে পারিনি। তারপরও আইজুল আমার ভিটেমাটি টুকুর পর্চা কেটে নেয়। এ নিয়েই ঝগড়া শুরু। এর আগেও সে আমাকে একাধিক বার মারপিট করে।

প্রতিবেশী মুদি দোকানদার মহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দোকানেই বসেছিলাম। এ সময় শরিফন হাপাতে হাপাতে আমার দোকনের সামনে এসে মাটিতে বসে পড়ে। দেখি তার হাত থেকে রক্ত ঝরছে। কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার জাকিয়া আক্তার বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বৃদ্ধা মাকে তার মেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতলে নিয়ে আসেন। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং হাতে রক্ত ঝরছিল। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।

বোদা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মানিক বলেন, আমি ঘটনাটি শুনে হাসপাতলে যাই এবং চিকিৎসার খোজ খবর নিই। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এ ধরনের পাষণ্ড ছেলেকে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ।

জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করি এবং নিজেও হাসপাতলে গিয়ে বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ-খবর নেই। আইনগত ব্যবস্থাসহ তার যথাযথ চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :অক্টোবর ১৪, ২০১৭ ১২:০১ অপরাহ্ণ