নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিটি ডিম তিন টাকা। অর্থাৎ ১২ টাকা হালি। যা বাজার দরের অর্ধেকেরও কম। আর জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৯০টি ডিম কিনতে পারবেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে ‘ডিম মেলায়’ ডিম বিক্রি হয়েছে এ দামে। দিনটি ছিল ‘বিশ্ব ডিম দিবস’। এ উপলক্ষে গত কয়েক দিন ধরেই, ফেসবুক, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও মুুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়ে প্রচারণা ছিল। কিন্তু এত লোকের সমাগম হয়েছিল যে, ডিমমেলা শেষ হয়েছে পুলিশের লাঠি চার্জ দিয়ে। এতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের এই উদ্যোগটি নিয়ে এখন আয়োজকরাও রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
কথা ছিল, শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবসে ঢাকার খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে ডিম বিক্রি হবে। কিন্তু সকাল ৮টার মধ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণ পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সকাল ৯টায় ক্রেতাদের লাইন বিজয় সরণি পার হয়ে যায়। হঠাৎ করে শুরু হলো হুলুস্থুল, ঠেলাঠেলি। সেই সঙ্গে ভাঙল কয়েক ডজন ডিম।
এরপরই পুলিশের বাঁশি বেজে উঠল। তারপর এক পশলা লাঠিচার্জ। বাঁশি বাজিয়ে আধাঘণ্টার মধ্যেই খালি করে দেওয়া হলো মেলা প্রাঙ্গণ। কিন্তু ভিড়ের চাপ আর অব্যবস্থাপনার কারণে বিশৃঙ্খলা, পুলিশ আর স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে হাতাহাতি, পুলিশের লাঠিপেটা আর বিক্ষোভের মধ্যে সকাল ১০টার আগেই পন্ড হয়ে গেছে তিন টাকায় ডিম বিক্রির প্রচারাভিযান। ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কিতে ডিম বিক্রির জন্য বানানো প্যান্ডেলও ভেঙে যায়।
ভোরবেলা থেকে ডিম কিনবেন বলে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের একজন ছাত্র মোহাম্মদ সোহেল। তিনি বলছেন, ‘ভাবলাম ছুটির দিন একটু মজা করে ঘুরব। আবার যাওয়ার সময় সঙ্গে করে ডিমও নিয়ে যাব। কিন্তু উল্টো হয়রানির শিকার হলাম।’
কয়েক ডজন ডিম কিনতে এসে লাঠিপেটা খেতে হলো কেন, সেই প্রশ্ন তুলে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেকে। এত ডিম কোথায় গেল? প্রশ্ন সেটাও। সকাল থেকে আয়োজন করা হয় রঙিন শোভাযাত্রা এবং ডিম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান। কিন্তু মেলায় আসা লোকজনের তা নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। তাদের আগ্রহ ছিল বাজার দরের অর্ধেকের কম দামে ডিম কেনা। পুরানা পল্টন থেকে ডিম কিনতে আসা গৃহবধূ সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘ডিম বিক্রির আয়োজন দেখে তার মনে হয়েছে, মানুষের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। কাউকে ডিম কিনে নিয়ে যেতে দেখলাম না। তাহলে এত ডিম গেল কোথায়? পুরো ব্যাপারটা একটা ধোঁকাবাজি। তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’
ডিম কিনতে অনেকেই সঙ্গে এনেছিলেন বালতি, ডিমের খাঁচি। ডিম না পেয়ে হতাশ-ক্ষুব্ধ ত্রিশোর্ধ্ব সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘ওরা তিন টাকায় ডিম বিক্রির জন্য লাখ টাকার প্রচার চালিয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করে, লাঞ্ছিত করে এখন খালি হাতে বিদায় করছে।’ আয়োজকরা যখন মাইকে ডিম বিক্রি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করছিলেন, সবাইকে ফিরে যেতে অনুরোধ করছিলেন, চারপাশ থেকে তখন ‘ডিম চাই, বিচার চাই’; ‘ভুয়া, ভুয়া’; ‘ডিম চোরের বিচার চাই’-স্লোগান দিচ্ছিলেন ক্রেতারা।
আয়োজকদের মুখপাত্র বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সদস্য বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য এক লাখ ডিম এনেছিলেন তারা। সকাল ১০টায় বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও মানুষের ভিড় দেখে ৯টার দিকেই বিক্রি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এত মানুষের চাপে আধা ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ফলে সকাল ১০টার আগেই ডিম বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ‘মানুষ এত অভূতপূর্ব সাড়া দেবে, তা আমরা ভাবতে পারিনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আমরা দুঃখিত। তবে ব্যর্থ হয়েছি তা বলব না, ডিম দিতে পারিনি ঠিক, তবে ডিমের প্রচার হয়েছে বলেন বিশ্বজিৎ।
পরে কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ডিম দিবস উপলক্ষে আমরা সাধারণ মানুষকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছি, তা হলো ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য এবং সবারই ডিম খাওয়া দরকার। আমরা চেয়েছিলাম সাধারণ মানুষ; বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা যেন কম দামে পরিবারের জন্য এক মাসের ডিম কিনে নিয়ে যেতে পারেন।’ বিশৃঙ্খলার কারণে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিম বিক্রি করতে না পারলেও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন মসিউর। তিনি বলেছেন, ‘আগামীতে আলোচনা সাপেক্ষে আবারও কম দামে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ